মার্কশিট হাতে সৃজনী। নিস্বজ চিত্র
প্রসূন বিশ্বাস: আর পাঁচটা শিশুকন্যার মতোই বড় হচ্ছিল সে। হঠাৎ ছন্দপতন! শরীরে দানা বাঁধে মারণ রোগ ক্যানসার। তখন তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া। ব্লাড ক্যানসার কেড়ে নেয় শৈশবটাই। লাগাতার কেমোথেরাপির যন্ত্রণায় কত বিনিদ্র রাত কেটেছে তার ইয়ত্তা নেই! তবে চিকিৎসায় সাড়া মিলছিল। কোভিডের সময় কেমোথেরাপি নিতে সমস্যা হয়েছিল। ফিরে আসে ক্যানসার। এবার আরও মারাত্মক আকার নেয়। ধীরে ধীরে চলে যায় দৃষ্টিশক্তি। তবু অদম্য জেদ তাকে জীবনযুদ্ধে থামাতে পারেনি। সদ্য প্রকাশিত হয়েছে মাধ্যমিকের ফল। যাবতীয় প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে নজরকাড়া সাফল্যে তাক লাগিয়ে দিয়েছে মেদিনীপুরের সৃজনী।
মেদিনীপুরের বাথানবেড়িয়ার বাসিন্দা সৃজনী মান্না। চলতি বছর শ্রীনিবাস বিদ্যামন্দির থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল সে। দৃষ্টিশক্তি হারানোয় সাহায্য নিয়েছিল রাইটারের। তাতেই তাক লাগানো সাফল্য। ৫৬৯ নম্বর পেয়ে স্কুলের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। শুধু নম্বর নয়, বিশেষভাবে সক্ষমদের জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে উঠেছে সৃজনী। দাদা সুমন্ত মান্না জানাচ্ছেন, “তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় ওর ক্যানসার ধরা পড়ে। মুম্বইয়ের টাটা মেডিক্যালে চিকিৎসা চলে। লাগাতার কেমো নিতে হয়। রোগ সারছিল কিন্ত কোভিড সব ওলটপালট করে দিল। কেমো নিতে সমস্যা হওয়ায় ফের দানা বাঁধে ক্যানসার। এর প্রভাবে চোখের দৃষ্টি হারায় বোন। তবে পড়াশোনা থেমে থাকেনি। একপ্রকার জেদ করেই মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছে। এই সাফল্যের পুরো কৃতিত্বই ওর। আমরা পাশে থেকেছি।” লড়াকু সৃজনী বলছে, “পরিবারই আমার কাছে সব। ওঁদের ছাড়া কিছু ভাবতে পারি না।” আগামীতে উচ্চশিক্ষার জন্য পরিবারকে ছাড়া থাকতে হলে কী করবে? কিছুটা থেমে উত্তর দেয়, “এখনও সেভাবে কিছু ভাবিনি।” কীভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিত সৃজনী?
ছকে বাধা পড়াশোনায় বিশ্বাসী নয় ‘বিস্ময় কন্যা’। যখন সময় মিলবে, পড়তেও ভালো লাগবে, তখনই পড়াশোনা। অনেকেই নিজেদের শারীরিক সমস্যায় ভেঙে পড়েন। হঠাৎ করে একদিন দৃষ্টিশক্তি হারানোর সৃজনী বলছে, “ভাগ্যে যা আছে, তা মানতে হবে। বেশি না ভেবে, সমস্যার কথা না ভেবে, আগামীর কথা ভাবা উচিত।”
উচ্চমাধ্যমিকে আর্টস নিয়ে পড়তে চায় সৃজনী। তারপর আইন অথবা সাইকোলজি নিয়ে উচ্চশিক্ষার ইচ্ছা রয়েছে তার। এই সিদ্ধান্তকেই সমর্থন করছেন বাড়ির সবাই। যৌথ পরিবার তার পাশে দাঁড়িয়েছে। বাবা-মা, কাকা-জ্যাঠারা বলছেন, যতদূর পড়তে চাইবে তাঁদের আদরের ‘মোম’, ততদিন পড়াবেন তাঁরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.