ফাইল ছবি
রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ও কল্যাণ চন্দ: কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বৈঠকে শুরুতেই হোঁচট খেল সিপিএম। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম পার্টির কর্মসূচির পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বহরমপুরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। সেই মতো তিনি অধীরকে বলেন,”ডোমকল থেকে ফিরে সন্ধেয় বৈঠকে বসবেন। কিন্তু সেলিমকে অধীর জানিয়ে দেন, আজ বৈঠক হবে না। পরে দেখা যাবে।” দলীয় সূত্রে এমনটাই খবর। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি এদিন সময় না দেওয়ায় কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের জোট বৈঠক থমকে গেল। স্বাভাবিকভাবেই আশাহত সিপিএম রাজ্য সম্পাদক। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয়টিও এগোল না।
আর এই বৈঠক ভেস্তে যাওয়ায় বামফ্রন্টের দলগুলির সঙ্গে আপাতত কৌশল ঠিক করে আসন নিয়ে আলোচনা এগিয়ে রাখতে চাইছে আলিমুদ্দিন। এদিনের বৈঠক ভেস্তে যাওয়া প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, “বৈঠকের কথা ছিল। কিন্তু অন্যত্র দলীয় কর্মসূচি থাকায় তা সম্ভব হয়নি। খুব শীঘ্রই বৈঠক হবে।” কিন্তু সিপিএম সূত্রে খবর, এদিন সবকিছু আগে থেকে ঠিকঠাক থাকলেও হঠাৎ করেই বৈঠক পরে হবে বলে অধীর কেন এদিন এড়িয়ে গেলেন তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। বৈঠকের কথা তিনি নাকি জানেনই না, মন্তব্য করেছেন বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ। অধীরের সঙ্গে পরে বৈঠক হবে বলে এদিন কোনওমতে মুখ বাঁচান মহম্মদ সেলিম। কারণ, বুধবারই সাংবাদিক বৈঠকে সেলিম দাবি করেছিলেন, অধীরের সঙ্গে বহরমপুরে তাঁর বৈঠক হবে। বৈঠকে আসন—বসন সব নিয়েই আলোচনা হবে।
চলতি সপ্তাহে বহরমপুর শহরে বড় জমায়েত করে আইন অমান্য আন্দোলন করেছিল সিপিএম। যে মঞ্চে হাজির ছিলেন স্বয়ং সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সেই আন্দোলনের টাটকা গন্ধ থাকতে থাকতেই মুর্শিদাবাদে অধীরর সঙ্গে সমঝোতা বৈঠক প্রসঙ্গ তুলে এনেছিলেন সেলিম। মুর্শিদাবাদ জেলায় বাম- কংগ্রেস ঐক্যবদ্ধ হলে বিজেপি-তৃণমূলকে টক্কর দেওয়া যেতে পারে, সেই লক্ষ্যেই এক ধাপ এগিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার বৈঠকের কথা জানিয়েছিলেন সেলিম। বৃহস্পতিবার দিনের শেষেও সেই বৈঠক আর হল না।
এ বিষয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি বলেন, ওই বৈঠকের কথা তিনি জানেন না, তাঁকে কিছু জানানোও হয়নি। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘বিষয়টি সেলিমকে জিজ্ঞেস করুন, উনিই ভালো বলতে পারবেন।’’ এদিন বহরমপুরের জেলা সিপিএম কার্যালয়ে সেলিম বলেন, তিনি সকালে ডোমকলে গিয়েছিলেন, এরপরে বহরমপুরে সম্পাদকমন্ডলীর বৈঠক, জেলা কমিটির বৈঠক করেছেন। তাছাড়া অধীর চৌধুরী বিভিন্ন কর্মসূচিতে ব্যস্ত ছিলেন, সে কারণে পরে যে কোন সময় ওই বৈঠক হবে বলে জানান সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। তিনি আরও বলেন, যেহেতু তিনি বহরমপুর আসছেন এবং বহরমপুরে অধীর চৌধুরী রয়েছেন, ফলে দু’জনের সাক্ষাৎ করার সুযোগ ছিল। সে কারণেই তিনি বৈঠক করা যেতে পারে বলে প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। কিন্তু কী এমন ঘটল যে বৈঠক হল না।
প্রসঙ্গত, কংগ্রেসকে ছাড়া যদি একা লড়তে হয় সেই ভয়ে এতদিন ঘুম হচ্ছিল না সিপিএম নেতাদের। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করতে চেয়ে আকুল হয়ে বসেছিল আলিমুদ্দিন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একলা চলার ঘোষণার পরই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করতে কার্যত ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সিপিএম। আর এদিন জোট ও আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা বৈঠক ভেস্তে যাওয়ায় স্পষ্টতই হতাশ সিপিএম নেতারা। বৃহস্পতিবার রাতের ট্রেনেই কলকাতার পথে রওনা দিয়েছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.