রমেন দাস: প্রস্রাবে সমস্যা! আর সেই সমস্যা মেটাতে গিয়েই মারাত্মক বিপদে রোগী। সোজা সেফটিপিনের প্রবেশ মূত্রনালিতে। এমনই এক চাঞ্চল্যকর ঘটনার সাক্ষী মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতাল। জানা গিয়েছে, প্রস্রাব আটকে যাওয়ায়, সমস্যা সমাধানে সেফটিপিন দিয়ে প্রস্রাবের দ্বার পরিষ্কার করছিলেন ওই ব্যক্তি! ঠিক তখনই সেই সেফটিপিন ঢুকে যায় ভেতরে। তারপরে তা পৌঁছয় একেবারে মূত্রনালির গভীরে।
মূত্রনালির ভিতরে পৌঁছে যাওয়া ওই সেফটিপিন কঠিন অস্ত্রোপচারের পর বের করেন চিকিৎসকরা। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে গত বুধবার হয়েছে অস্ত্রোপচার। অবশেষে প্রাণে বেঁচেছেন ওই রোগী।
কী হয়েছিল আসলে? হাসপাতাল সূত্রে খবর, প্রস্রাবের দ্বারে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে মেদিনীপুর সদর ব্লকের মণিদহ এলাকার এক বাসিন্দা প্রথমে যান দেপাড়া গ্রামীণ হাসপাতালে। সেখানে প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা তাঁকে পাঠান মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। জরুরি বিভাগ থেকে ওই রোগীকে পাঠানো হয় ওই হাসপাতালের শল্য বিভাগে। সেখানেই চিকিৎসকরা রোগীর একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান। হয় ইউএসজি, এক্সরে-সহ বহু পরীক্ষা।
কিন্তু রোগীর এক্সরে রিপোর্ট আসার পরেই চমকে ওঠেন শল্য বিভাগের চিকিৎসকরা। দেখা যায়, মূত্রনালির অনেকটাই ভেতরে চলে গিয়েছে একটি সেফটিপিন। মূত্রনালির গভীরে যে ‘মেমব্রেনাস ইউরেথ্রা’ রয়েছে, সেখানে আটকে রয়েছে সেটি। এই ‘মেমব্রেনাস ইউরেথ্রা’র পরিসর মাত্র ১.২৫ সেন্টিমিটার! এই ঘটনা চাক্ষুষ করতেই, তড়িঘড়ি অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন শল্য চিকিৎসকরা।
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায় ‘সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল’কে জানান, ‘‘অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে ওই রোগী আমাদের কাছে আসেন। নানা পরীক্ষা করানো হয়। দেখা যায়, মূত্রনালির গভীরে যে মেমব্রেনাস ইউরেথ্রা রয়েছে, সেখানে আটকে সেফটিপিন। রোগীকে সুস্থ করতে ওপেন সার্জারি করতে হয়। এইরকম ঘটনা খুব ঘন ঘন দেখা যায় না। ওই স্থানে সেফটিপিন চলে যাওয়া স্বাভাবিক ঘটনা নয়। রোগী আপাতত ভালো আছেন। সপ্তাহখানেক আগে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় রোগীকে। গত বুধবার হয় অস্ত্রোপচার। আগামী সোমবার ওই রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’’
মধ্যবয়সী এক ব্যক্তির সঙ্গে এমন ঘটনা বিরল না হলেও স্বাভাবিক নয় বলেই বলছেন চিকিৎসকরা। অনেকেরই দাবি, প্রস্রাবের দ্বার পরিষ্কার করার সময় সেফটিপিন মূত্রনালির গভীরে কীভাবে গেল, তা-ও অস্বাভিক! কিন্তু এমন কঠিন পরিস্থিতিতে রাজ্যের সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের কৃতিত্বকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন অনেকেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.