দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: অল্প সময়ে নাম-যশ অর্জন, নাকি প্রেমঘটিত কোনও কারণ, কেন মুম্বইতে খুন হতে হল কোন্নগরের মাস্টারপাড়ার বাসিন্দা আর্ট ডিরেক্টরকে৷ বছর সাঁইত্রিশের কৃষ্ণেন্দু চৌধুরির খুনের ঘটনায় রহস্যের জট৷ চোখের জলে ভাসছেন বৃদ্ধা মা৷ ছেলের মৃত্যুর মতো কঠিন বাস্তবকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি৷ ছেলেকে যে বা যারা খুন করেছে তাদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন৷
কৃষ্ণেন্দু কলকাতার আর্ট কলেজ থেকে পাশ করার পর ২০০৮ সালে মুম্বইতে পাড়ি দেন। গোরেগাঁওতে তিন বন্ধু মিলে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। প্রথমে কৃষ্ণেন্দু একটি কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন৷ তবে বেশ কয়েকদিন পর সেই কোম্পানি ছেড়ে নিজের ইন্টেরিয়ার ডেকরেশনের নতুন কোম্পানি খোলেন। মারাঠি কিছু চলচ্চিত্রেও আর্ট ডিরেকশনের কাজ করেন৷ মৃতের মা ছায়া চৌধুরি বলেন,‘‘গত চার বছর ধরে কৃষ্ণেন্দু বাড়ি আসেনি। আসার কথা বললেই বলত, কাজের খুব চাপ। তবে বাবা-মাকে সংসার খরচ বাবদ নিয়মিত টাকা পাঠাত।’’
বুধবার সন্ধে সাতটার সময় অসুস্থ ছায়া দেবী ছেলেকে ফোন করে বলেন, ‘‘প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে। আমি বেরোতে পারিনি। আমার ফোনের ব্যালেন্সটা একটু ভরে দে। কৃষ্ণেন্দু তখন মাকে বলে যে সে মালবনিতে একটা কনফারেন্সে রয়েছে। সেখান থেকে বেরিয়ে রাতের দিকে ব্যালেন্স ভরে দেবে।’’ মাঝে কেটে যায় দু’দিন৷ তবে ছেলে ব্যালেন্স ভরে দেননি তাঁকে৷ হয়তো কাজে ব্যস্ত তাই ব্যালেন্স ভরতে পারেনি বলেই ভাবেন কৃ্ষ্ণেন্দুর মা। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে কৃষ্ণেন্দুর আর্ট কলেজের বন্ধু রঞ্জিত ফোন করেন৷ কৃষ্ণেন্দু বাড়িতে ফোন করেছিলেন কি না, তা জানতে চান রঞ্জিত৷ এরপর উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন কৃষ্ণেন্দুর মা৷ ছেলেকে ঘনঘন ফোন করতে থাকেন তিনি৷ তবে সবসময়ই অপর প্রান্ত থেকে ভেসে আসে সুইচড অফ। শনিবার সকালে হঠাৎ মুম্বই থানা থেকে ফোন করে তাঁকে জানানো হয় মারা গিয়েছেন কৃষ্ণেন্দু৷ এরপরই নিহত আর্ট ডিরেক্টরের মাসতুতো ভাই মুম্বইয়ের উদ্দেশে রওনা দেন৷
কৃষ্ণেন্দুর ক্ষতবিক্ষত দেহ এবং গাড়ি উদ্ধার করা হয়েছে৷ তবে তাঁর ল্যাপটপ ও মোবাইলের কোনও হদিশ মেলেনি। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মহম্মদ ফুকরান-সহ মোট দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ ধৃত মহম্মদ ফুকরান কৃষ্ণেন্দুর আঁকা ছবি দিয়ে ডিজাইন তৈরি করতেন৷ ল্যাপটপ থেকে আঁকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল ফুকরান৷ এই ঘটনায় এক মহিলার জড়িত রয়েছে বলেই সন্দেহ করা হচ্ছে৷ কেন খুন হতে হল কৃষ্ণেন্দুকে, তা এখনও জানা যায়নি৷ খুব কম সময়ে বাঙালি শিল্পী অনেক উপরে উঠে গিয়েছিলেন বলেই কি শত্রুর সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল তাঁর, খতিয়ে দেখছে মুম্বই পুলিশ৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.