সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: প্রায় দশ বছর মেয়ের দেখা মেলেনি। অতি বামপন্থায় আস্থা রেখে বন্দুক হাতে নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল সে। কিন্তু ফেরার মাওবাদী নেত্রীর মা এবং পরিবার আজও বিশ্বাস করে, একদিন মেয়ে ফিরবেই। গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা রেখে এই পরিবার ভোট দিয়ে চলেছেন। মাওবাদী স্কোয়াড নেত্রী জবা মাহাতো আজও ফেরার। পরিবার চাইছে সে ফিরে আসুক আর পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করুক। বেলপাহাড়ির জামিরডিহা গ্রামের বাসিন্দা মাওবাদী নেত্রী জবা মাহাতোর পরিবার তাই আশায় দিন গোনে৷ তা পূরণের জন্যই রবিবার লুলকি মাহাতো ওড়লি বুথে ভোট দিয়েছেন। ভোট দিতে যাওয়ার আগে লুলকি দেবীর একটাই কথা “পুলিশ যদি মেয়েকে ধরতে পারে তাহলে যেন না মেরে ফেলে। একবার আমার সামনে নিয়ে আসুক। আমি ঠিক মেয়েকে বোঝাবো।”
অন্যদিকে এক সময় মাওবাদীদের ঝাড়গ্রামের এরিয়া কমান্ডার, আত্মসমর্পণকারী জয়ন্ত ওরফে সাহেবরাম এদিন নিজের গ্রাম জামবনি ব্লকের ঝাড়খন্ড সীমান্তবর্তী আমতোলিয়া গ্রামে এসে বুথে নিজের ভোট দিয়েছেন। ভোট দেওয়ার পর নিজের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে খানিক গল্পগুজব করেছেন। এক সময় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করা এই জয়ন্ত এদিন গণতন্ত্রে বিশ্বাস রেখে নিজের ভোটধিকার প্রয়োগ করেছেন। তাঁর বাবা কালীচরণ মুর্মু, মা কারমি মুর্মু-সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও গ্রামের বুথে গিয়ে ভোট দিয়েছেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে বর্তমানে জয়ন্ত হোমগার্ডের চাকরি পেয়েছেন। প্রায় দশ বছর আগে সাহেবরাম মাওবাদীদের হাত ধরে বাড়ি ছেড়ে ছিল। স্কোয়াডে নাম হয়েছিল জয়ন্ত। আত্মসমর্পণ করার পর গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে গ্রামে এসেছিলেন ভোট দিতে।
রবিবারও লোকসভা ভোট উপলক্ষ্যে সে গ্রামে এসেছিল ভোট দিতে। এদিন আমতোলিয়া গ্রামের বাড়িতে জয়ন্তর বৌদি আরতি মুর্মু বলেন, “সাহেবরাম এসেছিল। এদিন খাকি প্যান্ট পড়ে এসেছিল। ভোট দিয়েছে। বাড়িতে এসেছিল। বেশ কিছুক্ষণ বাড়ির সবার সাথে কথা বার্তা বলে। তারপর চলে যায়।” বেলপাহাড়ির জামিরডিহা গ্রামের বাসিন্দা জবা মাহাতোও বছর দশেক আগে হার্মাদদের অত্যাচার সহ্য করতে না পরে হাতে বন্দুক তুলে নিয়ে ছিল। বেলপাহাড়ি মাওবাদী স্কোয়াড নেতা মদন মাহাতোর হাত ধরে চলে যায়। পরে মদন মাহাতোকে সে বিয়ে করে বলে জানা যায়।
ছবি: প্রতিম মৈত্র
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.