বিপ্লব দত্ত, কৃষ্ণনগর: মাত্র ছাপান্ন বছর বয়সে কিডনি ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছিলেন ভ্যানচালক অসীম হাজরা। থাকতেন নদিয়ার নাকাশিপাড়া থানার পাটিকাবাড়ি এলাকার চ্যাঙা গ্রামে। সংসারে অভাব নিত্যসঙ্গী। তাই ঠিক মতো চিকিৎসা করানোর মত পয়সা ছিল না মৃতের পরিবারের লোকজনের। ওই বয়সেই মারা যান তিনি। তবে অসীম হাজরার মৃত্যুর পর তাঁর পরিবারের লোকজনের কপালে দেখা দেয় চিন্তার ভাঁজ। কীভাবে হবে সৎকার, তা নিয়েই তাঁরা চিন্তিত হয়ে পড়েন। কারণ, সৎকারের খরচ তো নেহাত কম নয়। সেই খরচের টাকা জোগাড় করবেন কী করে?
নিজে ভ্যান চালিয়ে যা আয় করেছেন, তা দিয়েই অসীম হাজরা কোনওরকমে চালিয়েছেন সংসার। দুই ছেলেকে বড় করেছেন। তাঁদেরও পেশা ভ্যান চালানোই। কিন্তু তাতেই কি সুরাহা হয়? অসীম হাজরার কিডনি রোগের চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ্য তাঁদের ছিল না। যতটা পেরেছেন, চেষ্টা করেছেন। শুক্রবার দুপুরে অসীম হাজরা মারা যাওয়ার পর দেখা দেয় একটি নতুন সমস্যা। কী করে হবে সৎকারের কাজ, প্রশ্ন ওঠে মৃতের পরিবারের লোকজনের মনে। শুধু তাই নয়, শ্মশানযাত্রা করতে গেলেও যে লাগে বেশ কয়েকজন মানুষ। তা-ই বা কোথায়?
[ আরও পড়ুন: ‘ইতিহাস যা হয়েছে ভুলে যান’, আসানসোলে বদলের ডাক মুনমুনের ]
এই সমস্যা যখন অসীম হাজরার পরিবারের লোকজনের মনে চেপে বসেছিল, ঠিক তখন গ্রামের মানুষজন এসে দাঁড়ান অসীম হাজরার পরিবারের পাশে। বাড়িয়ে দিলেন সহযোগিতার হাত। তাঁদের কাছে কে হিন্দু, কে মুসলিম, সেটা বড় কথা ছিল না। মানুষের পাশে দাঁড়ানোটা তাঁদের কাছে অন্যতম বড় ধর্ম হয়ে উঠেছিল। প্রতিবেশী হিসেবে নিজেদের কর্তব্যবোধ থেকেই তাঁরা এগিয়ে এসেছেন বলে জানিয়েছেন গ্রামের লোকজন। নিজেরাই চাঁদা তুললেন। সেই চাঁদার টাকা দিয়ে কেনা হল বাঁশ, সাদা কাপড়-সহ সৎকারের আরও সরঞ্জাম। শুধু তাই নয়, মৃতদেহ তাঁরাই নিয়ে যান পাটুলির শ্মশানঘাটে।
অসীম হাজরার ছেলেরা মুখাগ্নি করার পর শেষপর্যন্ত গ্রামের লোকজন থাকলেন সৎকারের কাজে। যা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অসীম হাজরার পরিবারের লোকজনই। তাঁরা ভাবতেই পারেননি, গ্রামের মুসলিম মানুষেরা তাঁদের পাশে এসে দাঁড়াবেন। তাঁদের দিকে হাত বাড়িয়ে দেবেন। অসীম হাজরার পরিবারের লোকজন বলেন, “গ্রামের মুসলিম মানুষেরা যদি আমাদের পাশে এসে না দাঁড়াতেন, আমরা যে কী করতাম শেষপর্যন্ত, তা জানি না। আমাদের গ্রামের মানুষ আমাদের নিকট আত্মীয়ের মতোই কাজ করেছেন।”
গ্রামের মসজিদের মাইক বেজে উঠেছিল। সেই মাইকের ঘোষণা শুনেই অসীম হাজরার বাড়িতে জড়ো হয়েছিলেন গ্রামের লোকজন। হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন অসীম হাজরার পরিবারের লোকজনের দিকে। নিজেরাই চাঁদা তোলেন। আর সেই চাঁদার টাকা দিয়ে করেন সৎকার। যদিও খুব বড় কিছু কাজ তাঁরা করেছেন, তা তাঁরা ভাবতে রাজি নন। তাঁদের বক্তব্য একটাই, “আমরা একই গ্রামে থাকি। প্রতিবেশী হয়ে প্রতিবেশীর পাশে থাকব, এটাই তো স্বাভাবিক। গ্রামের একজন আরেকজনের বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়াব না, তাই কি হয়? এটা তো আমাদের কর্তব্য। এটা এমন বড় কিছু ব্যাপার নয়।”
[ আরও পড়ুন: অন্য রূপে তৃণমূল প্রার্থী, বিবাদ ভুলে বিজেপি কর্মীর সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজন ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.