বিপ্লব দত্ত,কৃষ্ণনগর: আবারও মানবতার ধর্মকেই গুরুত্ব দিলেন আর এক মুসলিম যুবক । পবিত্র ইদের নমাজ শেষ করেই পরিচিত এক ব্যক্তির মৃতদেহ সৎকার করতে ছুটলেন শ্মশানে। সেইসঙ্গে গড়লেন সম্প্রীতির আরও এক নজির ।
স্পষ্টই বললেন, ‘হ্যাঁ, এটা ঠিক, ইদের দিনে নমাজ পড়ার পরে সবাই বাড়ি ফিরে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান। মেতে ওঠেন আনন্দ উৎসবে। হয়তো আমারও তাই করা উচিত ছিল। কিন্তু কী করব, আমাদের এলাকার পরিমলবাবু মঙ্গলবার রাতে মারা গেলেন। উনি খুব ভাল মানুষ ছিলেন। বহুদিন ধরে একই এলাকায় একসঙ্গে থেকেছি। ইদ তো আবার আসবে সামনের বছর। কিন্তু বহুদিনের পরিচিত পরিমলবাবু তো আর ফিরে আসবেন না। তাই তার শেষযাত্রায় যোগ দিতে মন চাইছিল। মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াব, এ আর এমন কী। আমাদের ধর্মেও তো তাই বলা আছে।’ খুশির ইদের দিনে পরিবারের সঙ্গে সময় না কাটিয়ে প্রতিবেশীর শ্মশানযাত্রায় যোগ দিয়ে মানবতার ধর্মের সার্থক রূপ দিলেন ওই যুবক।
নদিয়ার নাকাশিপাড়া থানার বেথুয়াডহরির মধ্যপাড়ার বাসিন্দা ওই যুবকের নাম সার্থক শেখ। বয়স ৩০ বছর। পেশায় ভ্যানচালক। তাঁর বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী পুতুল বিবি ও চার বছরের সন্তান আবির। খুশির ইদে সার্থক তাঁর স্ত্রী এবং সন্তানের জন্য কিনে দিয়েছেন নতুন পোশাক। বাবার সঙ্গে ইদের দিনে আনন্দ করার হয়তো ইচ্ছে ছিল ছোট্ট আবিরের। স্বামী ও সন্তান নিয়ে আনন্দমুখর দিন কাটানোর ইচ্ছে নিয়ে এই একটি দিনের জন্য সারাটা বছর অপেক্ষা করেছিলেন পুতুল বিবিও। কষ্টের সংসারেও এই দিনটিতে একটু হাসিতে খুশিতে কাটাতে চেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু ইদের নমাজ পড়ে বাড়িতে এসেই সার্থক তার স্ত্রীকে জানিয়ে দেন, তিনি পরিমলবাবুর মৃতদেহ সৎকারের জন্য শ্মশানে যাবেন। ছোট্ট আবিরকে কোলে নিয়ে আদর সেরে সার্থক শেখ এরপর রওনা দেন নবদ্বীপ মহাশ্মশানের দিকে। মানবতার ধর্ম পালনের জন্য।
বেথুয়াডহরির বুধবার হাটতলা এলাকার বাসিন্দা পেশায় ফটো বাইন্ডিংয়ের কর্মী পরিমল ঘোষ (৫৮) শ্বাসকষ্টজনিত কারণে মঙ্গলবার রাতে শক্তিনগর হাসপাতালে মারা যান। বুধবার সকালে পরিমল ঘোষের মৃতদেহ তাঁর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই খবর পেয়ে ওই এলাকার অন্যান্য ব্যবসায়ীরা ছাড়াও পেশায় ভ্যানচালক সার্থক শেখ, সাদ্দাম শেখ, মিঠুন শেখ ও ফুলু শেখরা ইদের নমাজ সেরে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন পরিমল ঘোষকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে। স্থানীয় ব্যবসায়ী শিবাজী মোদক জানিয়েছেন, ‘সাদ্দাম-সহ অন্যান্যরা পরিমলবাবুকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বাড়ি চলে গেলেও সার্থক আমাদের সঙ্গে শ্মশানযাত্রায় শামিল হতে চায়। যদিও আমরা সবাই মিলে তাঁকে বুঝিয়েছিলাম, ইদের দিনে পরিবারের সঙ্গে আনন্দ করে সময় কাটাও। কিন্তু সার্থক রাজি হয়নি। তার কাছে ইদের আনন্দের থেকেও বড় হয়ে দাঁড়িয়েছিল পরিমলবাবুর সৎকারে যোগ দেওয়াটা।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.