বিপ্লব দত্ত, কৃষ্ণনগর: প্রায় আড়াই লক্ষ কাঠের দেশলাই কাঠি কাঠের প্লাইবোর্ডের ওপরে লাগিয়ে দেশের বীর সৈনিকদের আত্মবলিদানকে সম্মান জানিয়ে অমর জওয়ান জ্যোতির ম্যাচস্টিক ইমেজের এক অসাধারণ শিল্পকর্ম। যে শিল্পকর্মের মাধ্যমে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে তৃতীয়বারের জন্য নাম তুলতে চলেছেন নদিয়ার শান্তিপুরের অনুপম সরকার। স্বাধীনতা দিবসের অবসরে তৈরি এই শিল্পকর্মের চূড়ান্ত পরিমাপ ও গণনার কাজ সম্পন্ন হবার পর তার যাবতীয় প্রামাণ্য নথিপত্র লন্ডনে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের দপ্তরে পাঠাবেন অনুপম। গিনেস বুকে এবার হ্যাটট্রিক করার পথে শান্তিপুরের শিল্পী।
বীর সৈনিকদের আত্মবলিদানকে সম্মান জানাতে পেরে তৃপ্ত অনুপম সরকার। বলেন, “গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ এর আগে দু’বার আমার শিল্পকর্মকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এবারও আমি সেই স্বীকৃতি পাব বলে আশা রাখছি। তবে না পেলেও আমার কোন দুঃখ নেই। কারণ, দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যে বীর সৈনিকরা আত্মবলিদান দিয়েছেন, আমার শিল্পকর্মের মাধ্যমে তাঁদের সম্মান জানাতে পেরে আমি সবচেয়ে বেশি গর্ব অনুভব করছি।”
জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ভারতবাসীকে ঐক্যবদ্ধ বার্তা দিয়ে প্রথমবার দীর্ঘতম স্ট্যাপল চেইন বানিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েছিলেন অনুপম। এরপর আপেলের বীজের মধ্যে থাকা সায়ানাইডের ক্ষতিকারক দিকের বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে দীর্ঘতম আপেল বীজের মালা তৈরি করে অনুপম দ্বিতীয়বার বিশ্বরেকর্ড করেন। এবার যুদ্ধের পরিবর্তে শান্তির বার্তা বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দিতে ইন্ডিয়া গেটের সামনে থাকা অমর জওয়ান জ্যোতিকে নিজের শিল্পকর্মের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন অনুপম সরকার।
৬ ফুট লম্বা, ৪ ফুট চওড়া কাঠের প্লাইবোর্ডের ওপরে মোট ২লক্ষ ৪৮ হাজার ৯১৬ টি দেশলাই কাঠি আঠা দিয়ে লাগিয়ে অনুপম তৈরি করেছেন অমর জওয়ান জ্যোতির ম্যাচস্টিক ইমেজ। বাড়িতে বসে সেই কাজ করতে সময় লেগেছে মোট ৪ মাস। এর আগে ১ লক্ষ ৩৬ হাজার ৯৫১টি কাঠের দেশলাই কাঠি দিয়ে দীর্ঘতম ম্যাচস্টিক লোগো তৈরি করে বিশ্বরেকর্ড গড়েছিলেন মেসাম রহমানি নামে ইরানের একজন শিল্পী । এবার সেই রেকর্ড ভাঙতে চলেছেন অনুপম। নিউ নর্মালের সময়কে কাজে লাগিয়ে দিনে প্রায় আঠারো ঘন্টা কাজ করে ৪ মাস সময় নিয়ে এই শিল্পকর্মের কাজ সম্পন্ন করেছেন ৩৪ বছরের শিল্পী।
স্বাধীনতা দিবসে শান্তিপুর বিডিও অফিস কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে স্থানীয় চাকফেরা গোস্বামী বাড়ির নাটমন্দিরে প্রায় আড়াই লক্ষ দেশলাই কাঠি দিয়ে তৈরি অনুপমের শিল্পকর্মের গণনা, পরিমাপের আয়োজন করা হয়েছিল। উপস্থিত ছিলেন বিডিও সুমন দেবনাথ, ব্লক অ্যাসিস্ট্যান্ট এগ্রিকালচারাল ডিরেক্টর সন্দীপ মিত্র, শান্তিপুরের সার্কেল ইন্সপেক্টর জয়ন্ত লোধ চৌধুরী, সার্ভেয়ার ইঞ্জিনিয়ার অভিজিৎ প্রামাণিক-সহ অনেকে। অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রানাঘাটের মহকুমা শাসক হরসিমরণ সিং, কলকাতা প্রেস ক্লাবের সেক্রেটারি কিংশুক প্রামাণিক।
চূড়ান্ত গণনা, পরিমাপ হয়ে যাওয়ার পর যাবতীয় নথি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে অনুপম সরকার পাঠিয়ে দেবেন লন্ডনের গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষের কাছে। তার তিন মাস পর গিনেস কর্তৃপক্ষ জানাবেন সিদ্ধান্ত। অনুপম জানিয়েছেন, দেশলাই কাঠি, আঠা, কাঠের প্লাইবোর্ড-সহ বিভিন্ন উপকরণের জন্য খরচ হয়েছে সাড়ে ১৬ হাজার টাকা। একাধিক দেশলাই কাঠি দিয়ে এই ধরনের কাজ করতে আগুন লেগে যাওয়ার ঝুঁকি তো থাকে। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে কাজটি করেছেন শিল্পী। সেই পরিশ্রম কতটা সফল হল। সেই উত্তর জানা যাবে তিন মাস পরেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.