নিজস্ব সংবাদদাতা, তেহট্ট: বিদেশে আর কাজ করবেন না, এবার বাড়ি ফিরে যাবেন। মৃত্যুর কয়েক ঘন্টা আগে ফোনে ছেলের কাছে এই ইচ্ছের কথা প্রকাশ করেছিলেন নদিয়ার থানারপাড়ার বাসিন্দা মইনুল শাহ। কিন্তু সেই ইচ্ছে আর পূরণ হল না। দেশে ফেরার আগেই কর্মস্থল সৌদি আরবে মৃত্যুর মুখে পড়লেন বছর ছেচল্লিশের এই শ্রমিক।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচ বছর আগে অভাবের সংসারে সুদে টাকা ধার নিয়ে সৌদি আরবে কাজে গিয়েছিলেন মইনুল শাহ। দাম্মাম আলজুবায় ফুলের বাগানে কাজ করতেন। এই দীর্ঘ সময় কাজের মধ্যে মাত্র দু’বার বাড়ি ফিরতে পেরেছিলেন। গত বছর এই সময়েই এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাড়ি ফেরেন। বাবা, মা, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা সবাইকে নিয়ে সেই সুখের সংসার অবশ্য বেশিদিন করা হয়ে ওঠেনি তাঁর। তার আগে বিদেশ বিঁভুইয়ে দুর্ঘটনার শিকার হতে হল। মইনুলের বছর পঁচিশের পুত্র রাজু শাহ জানিয়েছেন, “আমার সঙ্গে বাবার রোজ কথা হত। বেশির ভাগ দিন রাতে। রবিবার রাত আটটা নাগাদ বাবার সঙ্গে আমার কথা হয়। বাবা বলছিল, ‘অনেক দিন কাজ হয়ে গেল। এবার একেবারে বাড়ি ফিরে যাব। ওখানেই যা করার করব।’ তারপর ওখান থেকে বাবার সহকর্মীরা জানান, বাবা দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছে।” রাজু জানিয়েছিলেন, কুরবানি ইদের আগেই বাবার বাড়িতে ফেরার কথা ছিল। সেদিন রাতে সাইকেল নিয়ে বাবা কাজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে পিছন থেকে চার চাকার গাড়ি ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। বর্তমানে মইনুলের দেহ আল জুবার হাসপাতালে রয়েছে।
থানারপাড়ার নতিডাঙায় মইনুলের বাড়িতে এখন শোকের আবহ। স্ত্রী রাণুয়া বিবি, কন্যা রিয়া এবং ছেলে রাজু, সকলের এখন একটাই আরজি, বিদেশ থেকে দেহ দ্রুত দেশে ফেরানো হোক। এনিয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা। বুধবার স্থানীয় বিধায়ক মহুয়া মৈত্র এবং করিমপুর ২ বিডিওর কাছে যান মৃত শ্রমিকের পরিবারের লোকজন। করিমপুরের বিধায়ক মহুয়া মৈত্র জানিয়েছেন, ‘বিদেশমন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলেছি। কাগজপত্র বিডিওর কাছে চলে গেছে। আশা করছি, দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.