ছবি: প্রতীকী
বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: মাছ ভাজা ঠিকমতো হয়নি। রয়ে গিয়েছিল একেবারে কাঁচা। বেরোচ্ছিল কাঁচা মাছের গন্ধ। খাওয়া যাচ্ছিল না তরকারি। শেষ পর্যন্ত খাওয়া ছেড়ে উঠেই পড়েন এক বন্ধু। আর তা নিয়েই বেঁধে যায় দুই বন্ধুর মধ্যে গণ্ডগোল। বেশ কিছুক্ষণ ধরে ঝগড়াঝাটি চলার পর শেষ পর্যন্ত রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েন ওই বন্ধু। ঘুমন্ত অবস্থায় বন্ধুর হাতে খুন যুবক। সেই খবর এসে পৌঁছনোর পরই আকাশ ভেঙে পড়েছে নদিয়ার শান্তিপুর থানার ফুলিয়ার নবলা গ্রাম পঞ্চায়েতের উমাপুর গ্রামের বাসিন্দা যুবকের পরিবারের লোকজনের মাথায়। পরিবারের একমাত্র রোজগেরের খুনের খবর পাওয়ার পর এখন দুই সন্তানের মুখে কী করে খাবার তুলে দেবেন, তা নিয়েই ভেবে পাচ্ছেন না মৃতের স্ত্রী। অভিযুক্তের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি।
মৃতের নাম বিকাশ দাস। তাঁর পরিবারে রয়েছেন স্ত্রী, একটি ছেলে ও একটি মেয়ে। বিকাশের বাবা-মার মৃত্যু হয়েছে আগেই। বিকাশেরা দুই ভাই। বিকাশ ছিলেন বড়। তিনি পেশায় কাঠের মিস্ত্রি। সংসার চালানোর জন্য ঠিকাদারের অধীনে কাজ করতে চলে গিয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের পুণেতে। একইরকম কাজে বিকাশের ছোট ভাইও বর্তমানে কেরলে রয়েছেন। কাজ করে রোজগারের টাকা বিকাশ তাঁর স্ত্রীর নামে বাড়িতে পাঠাতেন। আর তাতেই চলত সংসার। পুণেতে বিকাশ তাঁর কয়েকজন সহকর্মীর সঙ্গে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন।
একই ঘরে থাকার সুবাদে প্রতিদিন রাতে কাউকে না কাউকে রান্না করতে হত। বৃহস্পতিবার রাতে রান্নার দায়িত্ব ছিল সুব্রত সন্ন্যাসী। মাছের ঝোল, ভাত রান্না করে সে। কাজ থেকে ফিরে এসে বিকাশ দাস খেতে বসেছিলেন। কিন্তু খেতে গিয়ে দেখেন মাছ ঠিকমতো ভাজাই হয়নি। তরকারি খাওয়া যাচ্ছে না। বন্ধু সুব্রতকে সেকথা বলেছিলেন। তা নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে বেঁধে যায় বচসা। বিকাশ না খেয়ে থালা ঠেলে দিয়ে উঠে ঘুমিয়ে পড়েন। অভিযোগ, এরপর পিছন থেকে একটি লোহার রড হাতে নিয়ে সুব্রত বিকাশ দাসের মাথায় আঘাত করেন। একই ঘরে থাকা আরও বাকি দু’জন ঠেকাতে গিয়েছিলেন। তারপরও দু’বার রড দিয়ে আঘাত করেন সুব্রত। কিছুক্ষণ পরেই মৃত্যু হয় বিকাশ দাসের।
শুক্রবার ভোর প্রায় তিনটে নাগাদ বিকাশের পরিবারের লোকজন তাঁর মৃত্যুর খবর পান। স্বামীর মৃত্যুর খবর জানার পর বিকাশের স্ত্রীর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। যদিও বাবার মৃত্যুর খবর জানে না বিকাশের ছেলেমেয়েরা। অভিযুক্তের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন নিহত বিকাশ দাসের শ্যালিকা মৌসুমী মিত্র।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.