নন্দন দত্ত, সিউড়ি: আন্তর্জালিক দুনিয়াটা বেশ ছোট। দূরত্বের মাপকাঠি এখানে অন্য। চাইলেই দূরদূরান্ত থেকে এক নিমেষে কাছে চলে আসা যায়। খানিকটা সেভাবেই সুদূর আমেরিকায় পাড়ি দিল বীরভূমের (Birbhum) সিউড়ির সন্দেশ, ভায়া লখনউ। তাও আবার খাঁটি নলেন গুড়ের সন্দেশ (Sweets), এই অসময়ে! যোগসূত্র একটি মাত্র কার্ড। তাতেই মন ভাল করা নলেন গুড়ের সন্দেশ মার্কিন প্রবাসী ছেলেমেয়ের কাছে পাঠাচ্ছেন লখনউয়ের ব্যক্তি। আর অসময় এত বড় লক্ষ্মীলাভের সুযোগ পেয়ে যারপরনাই আনন্দিত সিউড়ির দোকান মালিক। কষ্ট করেই এবার নলেন গুড়ের মিষ্টি বানাতে হল তাঁকে। তবু এত দূরের মানুষজনের রসনাতৃপ্ত করতে পারাটা সেই কষ্টের তুলনায় তো ঢের বেশি।
লালমাটির দেশ থেকে সূদূর আমেরিকায় (USA) ‘সন্দেশ’ যাত্রার কাহিনি কিন্তু বেশ অদ্ভুত। লখনউ নিবাসী চিকিৎসক সোনালি সাহা সিউড়ির সেহেড়া পাড়ার ছোট্ট এক মিষ্টির দোকান থেকে সন্দেশ নিয়ে যান। কলকাতার (Kolkata) চিকিৎসকের সিউড়ির সঙ্গে যোগ গত ১৭ বছর ধরে। তিনি লখনউ সঞ্জয় গান্ধী পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল সায়েন্সে চিকিৎসক হিসাবে কর্মরত। লখনউয়ের বছর পঁচাশির কে এন যাদবের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। সোনালি দেবী জানাচ্ছেন, মূলত মিষ্টির লোভেই সিউড়ি আসেন। সেখান থেকে নলেন গুড়ের মিষ্টি নিয়ে গিয়ে তা উপহার দিয়েছিলেন কে এন যাদবকে। তা চেখে মুগ্ধ লখনউয়ের ওই ব্যক্তি। তারপর তাঁর নজর পড়ে মিষ্টির বাক্সের উপরের লেখায়। সেখানেই দোকানের নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর লেখা ছিল।
আর সেটাই ছিল কে এন যাদবের কাছে জাদুকাঠি। মিষ্টির বাক্সের উপর ফোন নম্বর দেখে সরাসরি তিনি সিউড়ির সেই দোকানে যোগাযোগ করেন। দোকান মালিক বাপি ঘোষাল জানান, এর আগে দেশের বহু জায়গা, এমনকী আবু ধাবিতে এই তালশাঁস সন্দেশ গিয়েছে। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসে অর্ডার দিয়ে জুন মাসে নলেন গুড়ের (Nolen Gur) মিষ্টি বানিয়ে তা আমেরিকা পাঠানো বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এই আবহাওয়া নলেন গুড়ের সন্দেশ তৈরির পরিবেশ নয়। সঙ্গে এই অসময়ে খেজুরের গুড় জোগাড় করাও বড্ড কঠিন কাজ। তবে সবই সম্ভব হল চিকিৎসক ‘ম্যাডামে’র চরম ইচ্ছায়।
জিভে লেগে থাকা বীরভূমের এই সন্দেশের স্বাদ তিনি ছেলেমেয়ের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারবেন, তা জেনে আপ্লুত কে এন যাদব। বলছেন, ”৮৫ বছরে বিশ্বের বহু দেশ ঘুরেছি। কিন্তু এই মিষ্টি আমায় মুগ্ধ করেছে। নিউ ইয়র্কে এই গ্রীষ্মে ছেলেমেয়েকে আমার দেশের মিষ্টি পৌঁছে দিতে পারব, এটাই সবচেয়ে আনন্দের।” মিষ্টির দোকানে গিয়ে দেখা গেল বিমান যাত্রার জন্য সাজানো হচ্ছে অসময়ের নলেন গুড়ের সন্দেশ। বিদেশে মিষ্টি পাঠাতে অন্যরকম প্রস্তুতি নিতে হয়। দোকানের মালিক জানান, ”দু’কেজি সন্দেশ গেল আমেরিকায়। বাকি কয়েক কেজি গেল বেনারসে।”
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.