চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: উদ্ধার হল বিদ্রোহী কবির চুরি যাওয়া মূর্তি৷ তদন্তে নেমে ২৪ ঘন্টার মধ্যে নজরুলের মূর্তিটি উদ্ধার করল কুলটি থানার নিয়ামতপুর ফাঁড়ির পুলিশ৷ তবে ঘটনায় দুষ্কৃতীদের এখনও ধরতে পারেনি পুলিশ৷ মূর্তি চুরির কারণ নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে৷ পুলিশ জানিয়েছে তদন্ত চলছে৷ দুষ্কৃতীরা শীঘ্রই ধরা পড়বে৷
মঙ্গলবার রাতে নিয়ামতপুরের নজরুল উদ্যান থেকে কবির মূর্তিটি চুরি যাওয়ার পর থেকেই সর্বত্র নিন্দার ঝড় ওঠে৷ পুলিশের ওপর চাপ বাড়তে থাকে৷ কারণ জিটি রোডের ওপর নজরুল উদ্যানটির সামনেই রয়েছে পুলিশের আউটপোস্ট৷ উদ্যানের গা লাগোয়া রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের দলীয় কার্যালয়৷ সেই উদ্যানের বেদীতে রাখা ছিল সিমেন্টের নজরুল ইসলামের আবক্ষ মূর্তিটি৷ বুধবার সকালে স্থানীয় বাসিন্দাদের নজরে আসে, নজরুল উদ্যান থেকে কাজী নজরুল ইসলামের মূর্তিটি নেই৷ সিমেন্ট দিয়ে গড়া শক্তপোক্ত মূর্তি। চোখে ধূলো দিয়ে তা সরিয়ে ফেলা সহজ নয় মোটেও। তবু, রাতের আঁধারে সেই সিমেন্টের শরীর-সহ উধাও হয়ে যায় নজরুল ইসলাম। কুলটির নিউরোডের এমন ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে যান আসানসোলবাসী। ঘটনায় মূর্তি উদ্ধারের পাশাপাশি জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি ওঠে। বৃহস্পতিবার পুলিশ সেই মূর্তিটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। জানা গিয়েছে, নিয়ামতপুর ফাঁড়ির আইসি রাহুলদেব মণ্ডলের নেতৃত্বে মূর্তিটি উদ্ধার হয়। কিন্তু এই ঘটনায় জড়িত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। স্থানীয় কাউন্সিলর বাদল পুইতণ্ডি পুলিশকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, পুলিশ সক্রিয়তার সঙ্গে মূর্তিটি উদ্ধার করেছে। তবে অবিলম্বে দুষ্কৃতীদেরও গ্রেপ্তার করতে হবে। বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও কবি মনোজ মাজি বলেন এই ঘটনার পিছনে উদ্দেশ্য বা রহস্যের উদঘাটন হওয়া উচিত।
[খোয়া গেল নজরুলের আবক্ষ মূর্তি, শোরগোল কুলটিতে]
কুলটি লেখক শিল্পী সংঘ ও সাংস্কৃতিক কর্মী কিংশুক মুখোপাধ্যায় বলেন, মূর্তিটি উদ্ধার হল তার জন্য প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু সিমেন্টের মূর্তি কেটে নিয়ে যাওয়ার পিছনে কোন ষড়যন্ত্র কাজ করছে তা সামনে আসা উচিত। কবি পরিবারের সদস্য তথা নাতি সুবর্ণ কাজি বলেন মূর্তি উদ্ধার হয়েছে ভাল কথা। কিন্তু কবিকে অবমাননা করার ধৃষ্টতা যারা করছে তাদের শাস্তি হওয়াটা কাম্য। তিনি মনে করেন এর পিছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রও থাকতে পারে। পুলিশ সূত্রে দাবি করা হয়েছে, মূর্তিটি উদ্যানের কাছে এক জঙ্গল থেকে উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধার হওয়ার পর মূর্তিটি থানার সামনে টেবিলে রাখা হয়। দেখা যায় সাদা রঙের মূর্তিতে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মূর্তিটিকে থানায় আনার পর পুলিশ কর্মীরা গলায় মালা পরিয়ে দেন। মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, মূর্তিটি সংস্কার করে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা হবে। পরিত্যক্ত উদ্যানটিকেও পুরনিগমের পক্ষ থেকে সংস্কার করে সাজিয়ে তোলা হবে। তিনি বলেন সাধারণ চোর বা দুষ্কৃতীরা এই কাণ্ড ঘটায়নি। শহরের সম্প্রীতি নষ্ট করার উদ্দেশ্যে নজরুলের মূর্তি চুরি হতে পারে। তবে একটা বড় অংশ মনে করছেন জিটি রোডের ধারে ওই উদ্যানটিও দখল করার উদ্যেশে এই রকম ঘৃণ্য ঘটনা ঘটতে পারে। কয়েক বছর আগে কুলটির রবীন্দ্রভবন থেকে রবিঠাকুরের মূর্তি চুরি গিয়েছিল। ইস্কোর লোহার ঢালাইয়ের মূর্তি চুরির নেপথ্যে ছিল লোহা চোরের দল। পরে তারা হাতেনাতে ধরাও পড়ে, উদ্ধার হয় মূর্তিও। এবার বিদ্রোহী কবির মূর্তি ফিরে পাওয়া গিয়েছে ঠিকই, তবে দুষ্কৃতীরা অধরা। এডিসিপি (ওয়েস্ট) অনমিত্র দাস বলেন, মূর্তি উদ্ধার হয়েছে। দুষ্কৃতীরা তাড়াতাড়ি ধরা পড়বে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.