সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো, উত্তরবঙ্গ: দ্রুত বদলে যাচ্ছে প্রত্যন্ত বঙ্গের প্রাথমিক ক্ষেত্রে শিক্ষাব্যবস্থার ছবি। একদিকে সরকারি বাংলা মাধ্যম প্রাথমিক স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ক্রমশ কমছে। অন্যদিকে একের পর এক গজিয়ে উঠছে ইংরেজি মাধ্যমের কিন্ডার গার্টেন কেজি স্কুল। কোনওটার অনুমোদন আছে, কোনওটার নেই। বেশিরভাগ চলছে তিন কামরার ঘরে। জেলা শিক্ষাদপ্তরেও ছবিটা স্পষ্ট নয় পুরোপুরি। কোথায় কত এমন স্কুল আছে, সে ব্যাপারে সম্পূর্ণ স তথ্য নেই জেলা শিক্ষাদপ্তরে অথবা প্রশাসনের কাছে। কিন্তু গ্রামের ঢালাই রাস্তা দিয়েও এখন খাঁচায় ভরা কেজি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের গাড়ি দেখা যায়। কোনক্রমে সংসার চালানো পরিবারও তাদের ছেলে বা মেয়েকে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে দিতে ব্যস্ত। তাই সব মহলেই প্রশ্ন উঠেছে, বাংলা কি ধীরে ধীরে ব্রাত্য হচ্ছে?
সমস্যার শুরু কোভিড-১৯ অতিমারির পর। শিক্ষার্থীর অভাবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলি বন্ধ হতে শুরু করে। শুধুমাত্র শিলিগুড়ি মহকুমাতেই প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রায় ৭ হাজার পড়ুয়া কমে যায়। কিন্তু তারপর থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে।
শিলিগুড়ি শিক্ষা জেলায় ৩৯৪টি প্রাথমিক স্কুল ছিল। পড়ুয়ার অভাবে বন্ধ হয়েছে ৪টি। কিন্তু এই সময়কালে বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম কেজি স্কুলের সংখ্যা কত বেড়েছে সেই হিসেব কোথাও মেলেনি। জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিষদের কর্তারা অবশ্য জানিয়েছেন, এখন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। যে কারণে নতুন করে স্কুল বন্ধের সম্ভাবনা নেই। ২০১৯ সালে শিলিগুড়ি মহকুমাত ৩৯৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৬ হাজার শিক্ষার্থী ছিল। এরপর তিনটি বিদ্যালয় উঠে গেলেও ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রায় ৪২ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। এর কারণ, কোনও শিক্ষার্থী টানা সাত দিন অথবা তার বেশি সময় স্কুলে না গেলে, শিক্ষক তার বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন শিক্ষার্থী কেন ক্লাসে যাচ্ছে না। এছাড়াও
শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ বাড়াতে স্কুলগুলিতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া অনুষ্ঠান হচ্ছে।
জলপাইগুড়ি জেলায় ১৮টি মণ্ডলে বাংলা, হিন্দি এবং নেপালি মাধ্যম মিলিয়ে মোট ১২১৪টি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১ লক্ষ ৫ হাজারের মতো। তবে দেখা যাচ্ছে, প্রাথমিক স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা দিনে দিনে কমছে। এই ঘটনা বেশি নজরে আসছে জলপাইগুড়ি শহর এবং শহর সংলগ্ন এলাকায়। জলপাইগুড়ি জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শকের দপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী এই মুহূর্তে জেলায় ৮টি স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা শূন্য। যার মধ্যে জলপাইগুড়ি শহরের নরেশচন্দ্র স্মৃতি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মেহেরুন্নেসা প্রাথমিক বিদ্যানিকেতন, আর আর প্রাথমিক বিদ্যালয়, খালপাড়া প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। এছাড়াও জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের বাইরে, ধূপঝোড়া এফবি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মৌয়ামারি কৃষ্ণনগর বিএফপি রয়েছে। এখানেই শেষ নয়, ১০ জনের কম ছাত্রছাত্রী রয়েছে এমন প্রাথমিক স্কুল ২৯টি। অন্যদিকে ২০ জন বা তার কম ছাত্রছাত্রী আছে এমন স্কুলের সংখ্যা ৮৪টি। কিন্তু এই সময়কালে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সংখ্যা ও পড়ুয়া বেড়েছে।
আলিপুরদুয়ার জেলায় অবশ্য এখনও কোনও প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ হয়টি। তবে ১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ধুঁকছে। জেলায় বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম কেজি স্কুলের সংখ্যা বেড়েছে। তবে ইদানিং কিছু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইংরাজি মাধ্যম চালু হওয়ায় ছাত্রছাত্রীদের ভিড় বাড়ছে। উত্তর দিনাজপুরে সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত প্রাথমিক স্কুলের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪৮৬টি। কোভিডের পর পড়ুয়ার অভাবে স্কুল সংখ্যা কমে ১ হাজার ৪৬৬টি হয়েছে। তারমধ্যে রায়গঞ্জ শহর এলাকায় একাধিক সরকারি স্কুল বন্ধ হয়েছে। রায়গঞ্জের সাতটি স্কুলে পঠনপাঠন প্রায় বন্ধের মুখে। ফলে মাত্র পাঁচ বছরে জেলার সরকারি প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার কমেছে। ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে নথিভুক্ত পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ৮৬ হাজার। এখন সেই সংখ্যা হয়েছে ১ লক্ষ ৪২ হাজার। জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানানো হয়, প্রশাসনে নথিভুক্ত বেসরকারি বাংলা ও ইংরেজ মাধ্যমের স্কুলের সংখ্যা ২৯৩টি। তবে প্রশাসনের নজরের বাইরেও একাধিক বেসরকারি কেজি স্কুল রয়েছে। সেইসঙ্গে উর্দু মাধ্যমের বেসরকারি প্রাথমিক মাদ্রাসা রয়েছে। জেলা স্কুল পরিদর্শক রজনী সুব্বা বলেন, “আমি কালিম্পং থেকে মাত্র দুই দিন আগে জেলার দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। ফলে এখন কিছু বলা সম্ভব নয়।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.