অর্ণব দাস, বারাসত: গ্রামের তৃণমূল (TMC) নেতা বাবার সঙ্গে সভায় দেখা করতে গিয়েছিলেন ছেলে। একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া। কয়েকজন কর্মীদের সঙ্গে বাড়ি ফেরার পথে সিপিএম-আইএসএফের ছোঁড়া বোমায় মৃত্যু হয় তার। মঙ্গলবার গভীর রাতে দেগঙ্গার সোহাই শ্বেতপুর পঞ্চায়েতের (Panchayat Poll) বছর ১৭-র ইমরান হাসানের মর্মান্তিক এই পরিণতির ঘটনায় তোলপাড় পড়ে গিয়েছে। আইএসএফ নেতা নওশাদ সিদ্দিকির সভার পর থেকেই দেগঙ্গায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে। সেই উত্তেজনার মধ্যেই তরুণের মৃত্যু হয়েছে বলেই অভিযোগ তৃণমূলের। বুধবার মৃতের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন রাজ্যপাল। বারাসত জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়েছে। তাদের মধ্যে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরিস্থিতির উপর কড়া নজরদারি রাখা হচ্ছে।”
ঘটনাস্থল দেগঙ্গা ব্লকের সোহাই শ্বেতপুর পঞ্চায়েতের গাঙ্গআটি গ্রাম। সেখানের ৮৫ নম্বর আসনের তৃণমূল প্রার্থী হয়েছেন হাসনাহানা। প্রতিদ্বন্দ্বী নির্দল প্রার্থী সানিয়া পারভিন। প্রার্থী না দিতে পেরে তাঁকে সিপিএম এবং আইএসএফের জোট সমর্থন করেছে। এই গ্রামেরই দীর্ঘদিনের তৃণমূল নেতা এমদাদুল হক। তাঁর ছোট ছেলে ইমরান হাসান দেগঙ্গার কুমারপুর পরশমনি শিক্ষাবিতান স্কুলে একাদশ শ্রেণির ছাত্র। মঙ্গলবার রাতে তৃণমূল প্রার্থী সমর্থনের দক্ষিণপাড়ায় সভা করতে যান এমদাদুল। রাত একটু বেশি হওয়ায় ইমরান বাবার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। দেখা করে আনুমানিক রাত ১২টায় কয়েকজন তৃণমূল কর্মীর সঙ্গে ইমরান বাড়ি ফেরার সময় গাঙ্গআটি গ্রামে ঢুকতেই ঘটে বিপত্তি।
অভিযোগ, আইএসএফ ও সিপিএমের কর্মীরা তাঁদের লক্ষ্য করে বোমাবাজি শুরু করে। চার থেকে পাঁচটা বোমা ছোঁড়া হয় বলে অভিযোগ। একটি বোমা লাগে ইমরানের বুকের বামদিকে। খবর পেয়েই সভা থেকে তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে এসে এমদাদুল হক দেখেন ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে ছেলের। বোমের আঘাতে জখম হয়েছেন আরও দুজন তৃণমূল কর্মী। প্রত্যক্ষদর্শী তৃণমূলের কর্মী জাকির হোসেন বলেন, “বিরোধীদের টার্গেট ছিল সোহাই শ্বেতপুর অঞ্চলের তৃণমূলের সভাপতি অজিদুল হক সাহাজি। তাঁকে লক্ষ্য করেই প্রথমে একটি বোমা ছোড়া হয়েছিল। কিন্তু সেটি না ফাটায় তিনি প্রাণে বাঁচেন। এরপরই আমাদের লক্ষ্য করে পরপর বোমা ছুড়লে একটি বোমার আঘাতে মৃত্যু হয় ইমরানের। কিন্তু সে রাজনীতি করত না।” ঘটনাটি জানাজানি করতে মুহূর্তের মধ্যে এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
উত্তেজিত গ্রামবাসী ঘটনাস্থল সংলগ্ন বিরোধীদের কয়েকটি বাড়িতে এবং গাড়ি ভাঙচুর চালায়। পরে দেগঙ্গা থানার বিশাল পুলিশ বাহিনীকে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। মঙ্গলবার দুপুরে প্রথমে দেগঙ্গার রায়কোলা, বিকেলে বক্সিরহাটি এলাকায় তৃণমূল-আইএসএফের সংঘর্ষে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। আহত হয়েছিলেন ১০জন তৃণমূল কর্মী। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই এদিন রাতে নিরীহ ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশকেও কাঠগোড়ায় তুলেছেন গ্রামবাসীরা। তাদের অভিযোগ, দেগঙ্গা থানার পুলিশের নিস্ক্রিয়তার জন্যই এলাকায় এত বোমা মজুত করার সাহস পেয়েছেন রাজনৈতিক দলগুলি। পরেরদিন বুধবার সকাল থেকেও ছিল এলাকায় থমথমে পরিবেশ। এলাকায় মোতায়েন রয়েছে পুলিশ বাহিনী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.