সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে টহল দিচ্ছিল অজানা প্রাণী! তাঁর কার্যালয় লাগোয়া জঙ্গলে সেই অজানা বন্যপ্রাণীর পায়ের ছাপ দেখতে পেয়ে আতঙ্কে কাঁটা স্থানীয় বাসিন্দারা। ঘটনা একেবারে ঝাড়গ্রাম শহরের উপকণ্ঠে। পায়ের ছাপ কার, তা পরীক্ষা করে দেখছেন বনদপ্তরের কর্মী, আধিকারিকরা।
জঙ্গল লাগোয়া এলাকা নয়, এবার ঝাড়গ্রাম শহরেই দেখা গেল অজানা জন্তুর পায়ের ছাপ (Footprints)। শহরের এক নম্বর ওয়ার্ডের কদমকানন এলাকার শেষ প্রান্তে পুলিশ সুপারের অফিস। তার সামনের জঙ্গল এলাকায় মিলেছে বেশ কিছু পায়ের ছাপ। বুধবার সকালে কাজে বেরিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের তা চোখে পড়ে। বেশ বড় আকারের পায়ের ছাপ দেখে বাঘের আতঙ্ক ঘিরে ধরে তাঁদের। পরে বনদপ্তরের কর্মীদের খবর দেওয়া হলে বনকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পায়ের ছাপের ছবি সংগ্রহ করেন। বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, পায়ের ছাপ গুলি হায়না, নেকড়ে বা হুড়াল জাতীয় কোনও প্রাণীর হতে পারে। তবে এই প্রাণীটি এখনও পর্যন্ত মানুষ বা গৃহপালিত কোনও পশুর উপর হামলা চালিয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে ঝাড়গ্রামের ডিএফও (DFO) বাসবরাজ হোলেইচ্ছি বলেন, “এই ছাপগুলি দেখে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, ডগ গোত্রের কোনও অ্যানিম্যাল হবে।” স্থানীয় বাসিন্দাদের ধারণা, তা কোনও কোনও হিংস্র বন্যপ্রাণীরই।
গত জানুয়ারি মাসে বিনপুর থানার লক্ষ্মণপুর গ্রামে অজানা বন্যপ্রাণীর পদচিহ্ন দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। পরে বন দপ্তর তা পরীক্ষা করে দেখে বাঘের পায়ের ছাপ বলে অনুমান করে। এমনকী বেলপাহাড়ির জঙ্গলে বাঘ দেখেছেন বলেও দাবি করেছিলেন এক বাস যাত্রী। কিন্তু তারপর থেকে ওই এলাকায় বাঘের অস্তিত্বের কোনও খবর পাওয়া যায়নি। এবার ফের সেই একই ধরনের পায়ের ছাপ দেখে থরহরিকম্প দশা গ্রামের বাসিন্দাদের।
বছর দুয়েক আগে লালগড়ের বিভিন্ন জঙ্গলে একটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার (Royal Bengal Tiger) দেখা গিয়েছিল। বনদপ্তরের ট্র্যাপ ক্যামেরাতে ধরা পড়েছিল ছবি। পরে বাঘটি শিকারিদের হাতে মারা যায়। সেই ঘটনা থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে ধারণা তৈরি হয়েছে যে ঝাড়গ্রাম জেলার জঙ্গলে বাঘ থাকতে পারে।
এদিন শহরের একেবারে কাছে জঙ্গলে জন্তুর পায়ের ছাপ মেলায় ওই এলাকার লালবাজার, রাজবাঁধের মতো গ্রামে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। ওই এলাকার মানুষজন অনেকেই জঙ্গলের উপর নির্ভর করেন জীবিকার জন্য। কাঠ, পাতা সংগ্রহ করতে জঙ্গলে যান। সেখানে বছরভর লেগে থাকে হাতির তাণ্ডব। প্রাণহানি, ঘর নষ্ট তো হয়ই, চাষবাসেও ব্যাপক ক্ষতি হয় দাঁতালদের দাপাদাপিতে। পাশাপাশি হায়না, হুড়াল ও নেকড়ে বাঘ, বন শুয়োরের হামলাও চলে জঙ্গল মহলের বিভিন্ন জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলিতে। এই অবস্থায় অজানা প্রাণীর পায়ের ছাপ আশঙ্কা বাড়াচ্ছে।
ছবি: প্রতিম মৈত্র।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.