সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: সারনাথের পর পুরুলিয়া (Purulia) থেকেই জৈন ২৩ তম তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথের মূর্তি উদ্ধার। পুরুলিয়া দু’নম্বর ব্লকের গোলামারা গ্রাম পঞ্চায়েতের বরুয়াডি গ্রামের জোড় থেকে সোমবার সকালের দিকে বহু প্রাচীন এই মূর্তিটি উদ্ধার হয়। নবম থেকে দশম শতাব্দীর এই মূর্তি। আনুমানিক ১,২০০ বছর আগের। লোকসংস্কৃতি গবেষক ও পুরাকৃতি নিয়ে কাজ করা মানুষজনের কথায়, আন্তর্জাতিক বাজারে এর মূল্য ১০০ কোটি ছাড়িয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। শুকিয়ে যাওয়া বড়ুয়াডি জোড়ের পলিমাটি থেকে ওই মূর্তিটি উদ্ধার হলেও এদিন প্রশাসন নিজেদের হেফাজতে তা নিয়ে আসতে পারেনি। পুরুলিয়া দু’নম্বর ব্লক প্রশাসন ও পুরুলিয়া মফস্বল থানার পুলিশ ওই মূর্তিটি উদ্ধার করে জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের হাতে দেওয়ার চেষ্টা করলেও শেষমেশ তা ব্যর্থ হয়। এলাকার মানুষজন এদিন পুরুলিয়া দু’নম্বর ব্লকের আধিকারিকদের ঘেরাও করে জানান, “ঈশ্বর এখানে নেমে এসেছেন। তাই মূর্তি এখানেই থাকবে।” এর পরই সিঁদুর-চন্দন দিয়ে ওই মূর্তির পূজা শুরু হয়ে যায়। পুরুলিয়া জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের আধিকারিক সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী বলেন, “একটি পুরাকৃতির খোঁজ মিলেছে। পার্শ্বনাথের মূর্তি বলেই মনে করা হচ্ছে। এই বিষয়ে যথোপযুক্ত জায়গায় জানানো হয়েছে। মূর্তিটি দুর্মূল্য। কার্বন ডেটিং টেস্ট ভীষণই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।”
গত ৩১শে জুলাই পুঞ্চা ব্লকের ধাদকি মোড়-র কাছ থেকে সারনাথের মূর্তি উদ্ধার হয়েছিল। ওই মূর্তি এখন তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের আওতায় থাকা রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব অধিকারের কলকাতার বেহালায় রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রহালয়ে রাখা রয়েছে। ছোটনাগপুর মালভূমির এই পুরুলিয়া জৈনভূমি। জঙ্গলমহলের ‘মুক্ত জাদুঘর’ পুঞ্চার পাকবিড়রাতে একাধিক মূর্তি রয়েছে। এই জৈনদের মূর্তি এবার পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে গোলামারার কাছে পাওয়া গেল। এই ঘটনায় রীতিমত উচ্ছ্বসিত লোকসংস্কৃতি গবেষক থেকে পুরাকৃতি নিয়ে কাজ করা মানুষজন। পুরাতত্ত্ব ও লোকসংস্কৃতি গবেষক তথা জৈন সংস্কৃতি সংরক্ষক উপাধি পাওয়া সুভাষ রায় বলেন, “এটা জৈন ২৩ তম তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথ। কায়োৎসর্গ মুদ্রায় দাঁড়িয়ে আছেন। এই পুরুলিয়া জৈনভূমি। ফলত অতীতেও এমন মূর্তি মিলেছে। তবে এই মূর্তিটির শিল্পশৈলী দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য অনেক বেশি। আমরা চাই এই পুরাকীর্তিটি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করুক রাজ্য সরকার। কোনভাবেই যাতে অবহেলায়, অনাদরে পড়ে না থাকে।” তবে যেভাবে সিঁদুর ও চন্দন দিয়ে এই মূর্তিটির পুজো-পাঠ শুরু হয়েছে তাতে এর শিল্পশৈলী আর দৃশ্যমান নাও থাকতে পারে এমন আশঙ্কা করছে লোকসংস্কৃতি গবেষক থেকে তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ।
লোকসংস্কৃতি গবেষকরা বলছেন, জৈনদের ২৪ জন তীর্থঙ্কর রয়েছেন। একটি তীর্থঙ্করকে লাঞ্ছন (চিহ্ন) অনুযায়ী বোঝা যায় কে কোন তীর্থঙ্কর। ২৩ তম তীর্থঙ্করে সর্পকুন্ডলী বা সাপ থাকে। এই মূর্তিতে তা একেবারে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। তেমনই ২৪ তম তীর্থঙ্কর মহাবীরের ক্ষেত্রে সিংহ ও অজিতনাথ-র ক্ষেত্রে লাঞ্ছন হিসাবে হাতি থাকে। পার্শ্বনাথের মস্তকে সর্পছত্র রয়েছে । এছাড়া মূর্তির দুই পাশে দুই চামর ব্যঞ্জনকারী আছে। মূর্তির ওপরে মালা হাতে দুই গন্ধর্ব ও গন্ধর্বি রয়েছে। এছাড়া মূর্তির দু’পাশে চারজন করে আটজন জৈন যক্ষ ও যক্ষিণী আছে। তাছাড়া মূর্তির নিচে খোদাই করা রয়েছে সিংহ উপাসনারত রমনীর মূর্তি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.