সম্যক খান, মেদিনীপুর: মেদিনীপুর জেলা হাসপাতাল চত্বরের বিধান ব্লকের ছাদ থেকে উদ্ধার হল নিখোঁজ ডব্লিউবিসিএস অফিসারের দেহ। মৃতের নাম সমরেশ হাজরা (৩২)। ১৮ জানুয়ারি থেকে ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। পেশায় ডব্লিউবিসিএস অফিসার সমরেশবাবু মেদিনীপুরের শালবনি ব্লকের ভূমি সংস্কার দপ্তরে কর্মরত ছিলেন। বাড়ি হুগলির চুঁচুড়ার রবীন্দ্রনগরে। ঘটনাটি ঘটেছে মেদিনীপুর জেলা হাসপাতাল চত্বরে। গতকাল কর্তব্যরত নার্সদের চোখ এড়িয়েই হাসপাতালের সিসিইউ থেকে বেরিয়ে যান তিনি। তারপর আজ সকালে হাসপাতাল চত্বরের সিসি ইউনিট ভবনের ছাদ থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। ছাদে জলের ট্যাঙ্কের সঙ্গে বেশকিছু পাইপ ছিল। তাঁরই একটিতে গামছায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলছিলেন সমরেশবাবু। গামছাটিও তাঁরই। আত্মহত্যা করেছেন ওই রোগী। প্রাথমিক তদন্তে এমনটাই মনে করছে পুলিশ। যদিও ভাইয়ের মৃত্যুতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ এনেছেন দাদা অমলেশ হাজরা। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে পুলিশ। দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। একদিন নিখোঁজ থাকার পর রোগীর মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে হাসপাতাল চত্বরে।
জানা গিয়েছে, গত ৫ জানুয়ারি ডব্লিউবিসিএস অফিসার হিসেবে মেদিনীপুরে আসেন সমরেশ হাজরা। ওইদিন থেকেই শালবনি ব্লকের ভূমিসংস্কার দপ্তরে তাঁর প্রশিক্ষণ চলছিল। কাজের বাইরে বেশিরভাগ সময়ই মনমরা থাকতেন তিনি। মাসতিনেক ধরে মানসিক অসুস্থতাজনিত কারণে চিকিৎসাও চলছিল তাঁর। নিয়মিত ওষুধ খেতেন। গত ১৭ তারিখ রাতে একসঙ্গে সব ওষুধ খেয়ে ফেলতেই বিপত্তি ঘটে। রাতেই অজ্ঞান হয়ে যান। সকালে তাঁকে প্রথমে শালবনির ব্লক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে মেদিনীপুর জেলা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। রোগীর শারীরক অবস্থার অবনতি হচ্ছে দেখে সিসিইউতে রাখার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। এই কয়েকদিন সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন সমরেশবাবু। ২১ তারিখ রাতে রাউন্ডে বেরিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছেন তিনি। ২২ তারিখে তাঁকে জেনারেল বেডে দেওয়া হবে। আর ২২ তারিখ সকালেই সিসিউর নিজের বেড থেকে নিখোঁজ হয়ে যান ওই রোগী। সকাল ৭.৪৫ মিনিটে সকলের চোখ এড়িয়ে ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে যান এই তরুণ অফিসার। হাসপাতালের তরফে নির্ধারিত প্রত্যেকটি জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়। পুলিশে রোগী নিখোঁজের অভিযোগ জমা পড়ে। খবর দেওয়া হয় রোগীর হুগলির বাড়িতে। দাদা অমলেশ পাত্রও ভাইয়ের নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ করেন মেদিনীপুর থানায়। সারাদিন খোঁজ চললেও তাঁর সন্ধান পাওয়া যায়নি। আজ সকালেই হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা সমরেশবাবুকে লাগোয়া বিধান ব্লকের ছাদে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান।
মানসিক অসুস্থতাজনিত কারণে আত্মহত্যা করেছেন সমরেশ হাজরা। এমনটাই মনে করছে পুলিশ। তবে ভাইয়ের মৃত্যুতে হাসপাতালের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন মৃতের দাদা। কী করে সিসিউর মতো ইউনিট থেকে সকলের চোখ এড়িয়ে রোগী বেরিয়ে যায় তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। গোটা ঘটনার তদন্তের দাবি করে পুলিশে অভিযোগও দায়ের করেছেন। সুরাহা না মিললে মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও যাবেন তিনি। এমনটাই জানিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই হাসপাতালের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.