ছবি: প্রতীকী
দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়ে অমানবিক আচরণের অভিযোগ উঠল চন্দননগরের এক বেসরকারি নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে। পেটের রোগের চিকিৎসা করতে গিয়ে শোভন সাঁধু নামে এক রোগীর হাত–পা বেঁধে রাখা হল। যার ফলে তাঁর শরীরে একাধিক জায়গায় গভীর ক্ষত’র সৃষ্টি হল। এই খবর সামনে আসতেই রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়াল। স্তম্ভিত অন্যান্য হাসপাতালের চিকিৎসকরাও। বেসরকারি ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ও চুঁচুড়া (Chinsura) মহকুমা শাসকের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে ওই রোগীর স্ত্রী কাকলি দেবী।
জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই পেটের রোগে ভুগছিলেন শোভন সাঁধু। এরপরই তাঁকে চিকিৎসার জন্য ওই নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। করোনা পরিস্থিতিতে প্রথমে নিয়ম মেনে তাঁর করোনা পরীক্ষা হয়। ২৪ ডিসেম্বর রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। এরপর ওই নার্সিংহোমের ICU’তে রেখে শোভনবাবুর চিকিৎসা শুরু হয়। সেখানেই হাত–পা বেঁধে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু কাউকে জানাতে পারেননি শোভনবাবু। এদিকে, বেসরকারি সংস্থার ওই প্রাক্তন কর্মীর চিকিৎসার খরচও অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে। এরপর নতুন বছরের ২ তারিখ চুঁচুড়ার হাসপাতাল রোডের অপর একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে শোভনবাবুকে নিয়ে আসেন তাঁর স্ত্রী। সেখানে আবার করোনা টেস্টের পর দেখা যায় রোগী করোনা পজিটিভ। এরপর কাকলি দেবীকে ওই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয়, তাদের ওখানে করোনো রোগীর কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই।
এরপর তিনি চুঁচুড়ার মল্লিক কাশেম হাটের অজন্তা সেবা সদন হাসপাতালে স্বামীকে ভর্তি করান। একই সাথে পেটের রোগ ও করোনার চিকিৎসা শুরু করেন চিকিৎসকরা। কিন্তু ওই রোগীর পোশাক পরিবর্তনের সময় স্বাস্থ্যকর্মীদের চক্ষু চড়কগাছ! তারা দেখেন রোগীর হাত ও পায়ের বিভিন্ন অংশে দগদগে ঘা হয়ে গিয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা রোগীকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করতেই শোভনবাবু কাঁদতে কাঁদতে বলেন, তিনি পেটের যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন বলে নার্সিংহোমে তাঁর হাত–পা দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল। বাঁধনের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে খুলে দেওয়ার জন্য বারংবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তাঁর বাঁধন খুলে দেওয়া হয়নি। যেখানে যেখানে দড়ির বাঁধন দেওয়া হয়েছিল শরীরের সেই অংশে দড়ি বসে গিয়ে দগদগে ঘা হয়ে গিয়েছে।
স্বামীর উপর এই নির্মম অত্যাচারের ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই কাকলি দেবী ওই নার্সিং হোমের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি চুঁচুড়া মহকুমাশাসক ও হগলি জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকরিকের কাছেও লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী জানান, তিনি অভিযোগ পেয়েছেন। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এই ঘটনায় অভিযুক্ত নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ মুখ খুলতে চাননি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.