সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: গণপিটুনি রুখতে প্রশাসনের এত সচেতনতা প্রচার, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। এমনকী বিল এনে আইন প্রণয়নের পথেও একধাপ এগিয়ে গিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। তবু বাস্তব পরিস্থিতি যে এতটুকুও বদলায়নি, ফের তার প্রমাণ মিলল শুক্রবার পুরুলিয়ার ঘটনায়। স্রেফ ছেলেধরা সন্দেহ করে পথভোলা, মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবককে গাছে বেঁধে গণপিটুনি দিল জনতা। বলরামপুর থানার উরমায় এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়াল। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই যুবককে উদ্ধার করে। তবে পুলিশের দাবি, মারধরের ঘটনা ঘটেনি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আক্রান্ত ব্যক্তি আসলে উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা। তাই পুরুলিয়া পুলিশ উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে বাড়ি ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙার বাসিন্দা ওই যুবকের নাম কর্পূর শেখ। তার বয়স কুড়ির আশেপাশে। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। কোনও কারণে দিল্লি থেকে ভুল করে এই এলাকায় চলে আসেন। বলরামপুর থানার পুলিশ জানতে পেরেছ, দিল্লি থেকে শুক্রবার তিনি খড়গপুর স্টেশনে নামেন। তারপর ভুল করে পুরুলিয়ার ট্রেনে উঠে পড়ে উরমা স্টেশনে পৌঁছান। অভিযোগ, স্টেশন থেকে আসার পথে দুই মহিলাকে দেখে কর্পূর শেখ তাঁদের মারধরের
হুমকি দেন।
তারপরই কর্পূর শেখকে ছেলেধরা বলে সন্দেহ করতে শুরু করেন তাঁরা। গোটা উরমা জুড়েই এই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। তারপরই তাঁকে গাছে বেঁধে শুরু হয় মারধর। তবে ছেলেধরা সন্দেহে গনপিটুনির বিষয়টি অস্বীকার করেছে পুলিশ। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া বলেন, “ছেলেধরা সন্দেহে কোন মারধরের ঘটনা ঘটেনি।”
গত রবিবারও পুরুলিয়া মফস্বল থানা এলাকায় ‘ছেলেধরা’ সন্দেহে স্থানীয় বাসিন্দারা দুই যুবককে ঘিরে রাখে। ওই সপ্তাহে কাশীপুরের সোনাইজুড়িতেও ছেলেধরা গুজবে এলাকার মানুষজন একজনকে ধাওয়া করে। তবে এই গুজবের ভিত্তিতে সাধারণ মানুষকে কোনওরকম পদক্ষেপ না নিতে এবং পুলিশ ব্যাপকভাবে প্রচার করছে। মাইকিং, প্রচারপত্র ছাপানো ছাড়াও স্কুলে স্কুলে গিয়ে শিবির করে ভয় ভাঙাচ্ছে। কিন্তু তবুও এই আতঙ্ক কাটছে না। পুরুলিয়ার গাঁ–গঞ্জে অপরিচিত লোক দেখলেই ঘেরাও করে চলছে জেরা, মারধরও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.