তারক চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: এ যেন বলিউডের সুপারহিট ছবি “বীর-জারা” ছবির এক দৃশ্য। যেখানে পাকিস্তানে নায়ক শাহরুখ খান ২২বছর ধরে জেলে বন্দী থাকলেও কেউ ঘুণাক্ষরেও তাঁর পরিচয় পায়নি। বহু চেষ্টা করে মাথার ঘাম পায়ে ফেললেও তাঁর মুখ খোলাতে ব্যর্থ পুলিশ প্রশাসন। পরে আইনজীবী রাণী মুখোপাধ্যায়ের একান্ত চেষ্টায় পরিচয় উদ্ধার হয় শাহরুখ খানের (Shah Rukh Khan)। শুভ সমাপ্তি হয় ছবির। ওই ছবির মতোই কোনও এক রাণী মুখোপাধ্যায়ের সন্ধানে এবারে জলপাইগুড়ি জেল ও ভক্তিনগর থানার পুলিশ। বিষয়টা কী?
আট বছর ধরে জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) জেলে বন্দি নাম পরিচয়বিহীন এক যুবক। তাকে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের দায়ে ২০১৩ সালে ফুলবাড়িতে বিএসএফ (BSF) গ্রেপ্তার করে ভক্তিনগর থানার হাতে তুলে দিয়েছিল। ১৪ ফরেনার্স অ্যাক্টের আওতায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর তাকে জলপাইগুড়ি জেলে পাঠানো হয়। সেই থেকেই অজ্ঞাত পরিচয় কয়েদি হিসেবেই রয়েছে ওই যুবক। যদিও শাহরুখ খান ও এই যুবকের মধ্যে একটাই পার্থক্য রয়েছে। ছবির নায়ক কথা বলতে কানে শুনতে পারলেও সে ইচ্ছে করে কিছুই বলতো না। যদিও বাস্তবের ওই কয়েদি কথা বলতে বা কানে শুনতে পারে না। যদিও লিখতে পারেন ওই যুবক। তা সত্ত্বেও তাঁর ঠিকানা বা বাড়ির লোকেদের সম্পর্কে কোনও তথ্য জোগাড় করতে পারেননি জেলের বা পুলিশের কোন আধিকারিক। সম্প্রতি জলপাইগুড়ি আদালত ওই যুবকের পরিচয় খুঁজে বার করার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশকে। যার পর থেকে আরও বেশি নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ।এই বিষয়ে এই মামলার সরকারি আইনজীবী মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরেই ওই যুবকের পরিচয় জানার চেষ্টা চালাচ্ছি। বহু চেষ্টাতেও কিছু খুঁজে পাওয়া যায়নি। আদালত তাঁর খোজ পাওয়ার জন্য সম্প্রতি আবার নির্দেশিকা জারি করেছে।”
এই মামলার সঙ্গে যুক্ত পুলিশ আধিকারিক দেবব্রত খাঁ বলেন, “আমাদের কাছে ওই যুবককে বিএসএফ আট বছর আগে তুলে দিয়েছিল। তারপর আদালতের নির্দেশে তাকে জেলে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তাঁর পরিচয় পাওয়ার জন্য বহু চেষ্টা করেও আমরা ব্যর্থ। আমাদের নিজেদের দিক থেকে এখনও চেষ্টা চালাচ্ছি।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ওই যুবককে ফুলবাড়ি-বাংলাবান্ধা সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করেছিল বিএসএফ। তাঁর কাছে কিছু বাংলাদেশী মুদ্রা ও নথি পাওয়া গিয়েছিল। যদিও তার পরিচয় পাওয়া যাবে এমন কোনও নথি মেলেনি। এরপর বিএসএফ তাকে ভক্তিনগর থানার হাতে তুলে দিয়েছিল। নির্দিষ্ট ধারায় মামলা করে ওই যুবককে আদালতে পাঠানো হয়। পুলিশের একটি মহলের ধারণা কানে শুনতে অপারগ বা কথা না বলতে পারলেও লিখতে পারে সে। তা সত্ত্বেও তাঁর পুরনো জায়গা সম্পর্কে না জানানোর পেছনে তাঁর সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। পরিচয় যদি না জানা যায় তবে সারাজীবন তাকে জেলেও কাটাতে হতে পারে বলে আশঙ্কা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.