শংকর কুমার রায়, রায়গঞ্জ: তিন তালাকের প্রতিবাদ করায় অন্তঃসত্ত্বা বধূকে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগে চাঞ্চল্য ছড়াল মঙ্গলবার। এমন নক্ক্যারজনক ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয় স্বামীকে।
সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের গৌরী পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত গ্রাম বিশাহারে। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই বধূর নাম শাহানাজ খাতুন (২৪)। বছর তিনেক আগে বিয়ে হয়েছিল তাঁর। বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরবাড়ির লোকেরা শাহানাজের উপর শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করত বলে অভিযোগ। বিয়ের এক বছর পর কন্যা সন্তান জন্ম দেন শাহানাজ। কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়ায় অত্যাচারের মাত্রা আরও বাড়ে। মেয়ের উপর অত্যাচার রুখতে গত তিন বছরে শ্বশুরবাড়িতে কখনও দশ হাজার আবার কখনও ১৫ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন বলে দাবি শাহানাজের বাড়ির লোকেদের। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি।
আক্রান্তের পরিবারের দাবি, সোমবার সন্ধেয় বৈবাহিক সম্পর্ক নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর বচসা শুরু হয়। স্বামী মোতাব্বির আলম পেশায় ঠিকা শ্রমিক। মহারাষ্ট্রে একটি নির্মাণ সংস্থায় কর্মরত। ইদের উৎসবে রায়গঞ্জের বাড়িতে এসেছিল। এদিন হঠাৎ স্ত্রী শাহনাজকে তিন তালাক দেয় মোতাব্বির আলম। সঙ্গে সঙ্গে তালাকের বিরোধিতা করে রীতিমতো প্রতিবাদে সরব হন স্ত্রী। আর তাতেই শ্বশুড়বাড়ির রোষের মুখে পড়তে হয় তাঁকে। স্বামীর পাশাপাশি শ্বশুরবাড়ির অন্যান্য সদস্যরাও ব্যাপক মারধর করে অন্তঃসত্ত্বাকে বলে অভিযোগ।
খবর পেয়ে পাশের ইটাহারের গোরাহার থেকে ছুটে আসেন মহিলার বাপের বাড়ির লোকেরা। তারপর গুরুতর জখম অবস্থায় মেয়েকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভরতি করান। এদিকে তিন তালাক দেওয়ার প্রতিবাদে শাহানাজের বাপের বাড়ির লোকেরা অভিযুক্ত স্বামীকে নিজের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গৃহবধূর বাড়ি নিয়ে যান বলে অভিযোগ। সেখানে তড়িঘড়ি গ্রামের মাতব্বরদের উদ্যোগে সালিশি সভার আয়োজন করা হয়।
মোতাব্বির আলমের সাফ কথা, “আমার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছি। ওকে গ্রহণ করা আর কোনওভাবেই সম্ভব নয়। আমি আর ওর সঙ্গে ঘর করব না।” এরপর খবর যায় ইটাহার থানায়। পুলিশ এসে অভিযুক্ত জামাইকে গ্রেপ্তার করে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮(এ)/৩০৭ ধারায় মামলা রুজু হয়। এদিন আদালতে তোলা হলে অভিযুক্ত মোতাব্বিরকে জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। জখম গৃহবধূ বলেন, “তালাক দেওয়ার নিয়ম নেই। আমি তালাক দেওয়ায় প্রতিবাদ করি। বেধড়ক মারধর করে স্বামী আর শ্বশুরবাড়ির লোকজন। আমি স্বামীর চরম শাস্তি চাই।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.