সঞ্জিত চক্রবর্তী। রায়গঞ্জের কসবার বাসিন্দা। নিজস্ব চিত্র।
শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: সংখ্যালঘু হওয়া অপরাধ! মৌলবাদীদের হাত থেকে রেহাই পেলেন না ওপারের ৭০ বছর বয়সি প্রাক্তন পুলিশ আধিকারিকও। তাঁর বগুড়ার বাড়িঘর আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি পুরকাউন্সিলর ভাইয়ের তিনটি দোকানে লুট করে আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছে মৌলবাদীরা। এমন দুঃসংবাদ পেয়েই কান্নায় ভেঙে পড়লেন এপারের ভাই সঞ্জিত চক্রবর্তী।
রায়গঞ্জের কসবার বাড়ির বারান্দায় বসে কাঁদতে কাঁদতে পঞ্চান্ন বছরের ভাই সঞ্জিত চক্রবর্তী বলেন, “বাংলাদেশের পীরগঞ্জ থানার পুলিশ অফিসার ছিলেন। আর মেজো দাদা তরুণ চক্রবর্তী বগুরার দত্তপাড়ার আওয়ামী লিগের পুর কাউন্সিলর। কিন্তু বগুড়া জেলার দত্ত পাড়ায় পরিবার নিয়ে দুই দাদা থাকেন। কিন্তু গতকাল রাত থেকে আর ফোনে কোনও যোগাযোগ নেই। খবর পেলাম, দাদাদের বগুড়ার দত্তপাড়ার বাড়িঘর এবং সাতমাথা মোড়ের মার্কেটের তিনটি কাপড়ের ও মুদির দোকানে আগুনে লাগিয়ে দিয়েছে মৌলবাদীরা। এখন বাড়ি থেকে পালিয়ে কোথাও আছে,তা জানি না। গত বছর মেজো দাদা রায়গঞ্জের বাড়িতে এসেছিলেন। তারপর ফিরেও যান।”.সঞ্জিতবাবু এবং তাঁর স্ত্রী তৃপ্তি চক্রবর্তী যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন বগুড়ার দত্তপাড়ার প্রতিবেশীদের সঙ্গে। কিন্তু কোনও খোঁজ নেই দুই দাদার।
সঞ্জিতবাবুর দাদা স্বপন চক্রবর্তী বাংলাদেশের পীরগঞ্জ থানার পুলিশ আধিকারিক ছিলেন অপর দাদা তরুণ চক্রবর্তী। ষাট বছর বয়স। দত্তপাড়া পুরসভার আওয়ামী লিগের কাউন্সিলর। সেখানে নিজস্ব মার্কেটে লুট করে আগুনে ছাই করে দিয়েছে হামলাকারীরা। দুই ভাই-ই বাংলাদেশে সুপ্রতিষ্ঠিত। কিন্তু হাসিনা সরকারের পতনের পর উত্তাল বাংলাদেশে আগুনে সব হারিয়ে প্রাণে বাঁচতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ওপারের দাদারা। এদিন রায়গঞ্জের দেবীনগর কসবার বাসিন্দা ভাই সঞ্জিতবাবু বলেন,”খবরটা পাওয়ার পর থেকে রাতের ঘুম আর নেই। দুই দাদার কাছে কত না সাহায্য পেয়েছি। কিন্তু এখন তাঁরাই প্রাণে বাঁচতে বাড়ি হারিয়ে কোথায় রাত কাটছে,জানি না।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপরে নির্মম নির্যাতনের ঘটনায় উদ্বেগে এপারের স্বজন। নিষ্ঠুর অত্যাচারের ঘটনায় শিয়রে উঠছেন আতঙ্কিত এপারবাসী। সঞ্জিতবাবু আরও বলেন, “গত দুদিন ধরে ভয়ঙ্কর গোলমালে দত্তপাড়া অগ্নিগর্ভ এখন। দাদাদের পরিবারের কোনও খোঁজ মিলছে না। তাঁরা কী অবস্থায় রয়েছেন, আদৌ বেঁচে আছেন নাকি তাঁদের মৃত্যু হয়েছে জানতে পারছি না। রায়গঞ্জ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান অরূপ ঘোষের ছেলে ওখানে ডাক্তারি পড়ায় ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে এলাকার বাসিন্দাদের। ওঁর মারফত খবর পেয়েছি। জানতে পারি, তাঁদের বাড়িঘর ভেঙে, পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে । খুব অসহায় লাগছে। যোগাযোগ করার চেষ্টা করে চালাচ্ছি।” রায়গঞ্জ মহকুমাশাসক কিংশুক মাইতি বলেন,” ওপারের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সমস্যা হলে, বাংলাদেশের হাই কমিশনারের মাধ্যমে যোগাযোগ করা যেতে পারে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.