সুমন করাতি, হুগলি: ফের রাজ্যের সরকারি হাসপাতালের বড় সাফল্য। টিউমারের জঠিল অস্ত্রোপচারে সাফল্য পেল চন্দননগর মহকুমা হাসপাতাল। অস্ত্রোপচারে মহিলা রোগীর হাত থেকে ৫০০ গ্রামের টিউমার বার করলেন চিকিৎসকরা। সফল অস্ত্রোপচারের কারণে কার্যত প্রাণ ফিরে পেলেন হুগলির বাসিন্দা মিতা রায়। ডান হাতে বিশাল টিউমার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন তিনি। চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন রোগীর পরিবারের সদস্যরা।
হুগলির ভদ্রেশ্বরের বিঘাটি গৌরাঙ্গপুরের বাসিন্দা বছর পঞ্চাশের মিতা রায় দীর্ঘ ছয় বছর ধরে ডান হাতের নিম্নাংশে (বগলে) টিউমারের সমস্যায় ভুগছিলেন। বহু চিকিৎসকের ‘দুয়ারে’ ঘুরেও সুস্থ হতে পারেননি। বছর খানেক ধরে হোমিওপ্যাথি ওষুধও খাচ্ছিলেন। শেষমেশ সরকারি হাসপাতালে যোগাযোগ করেন মহিলা। এর পর গত এক মাস ধরে চন্দননগর হাসপাতালে আউটডোরে সার্জেন্ট আত্মদ্বীপ বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে ছিলেন তিনি।
দিন কয়েক আগে অ্যানাস্থেটিক চিকিৎসক স্বরূপ পণ্ডিতের তত্ত্বাবধানে মহিলাকে সম্পূর্ণ অজ্ঞান করে অপারেশন করা হয়। অস্ত্রোপচার করে ৫০০ গ্রাম ওজনের টিউমারটি বার করা হয়। যা লম্বায় ও চওড়ায় এক ফুট। হাসপাতাল সূত্রে খবর ওই মহিলা সুস্থ রয়েছেন।
চিকিৎসক আত্মদীপ বিশ্বাস জানান, যে জায়গায় টিউমারটি ছিল, সেখানে দিয়ে অনেক নার্ভের সংযোগ রয়েছে। টিউমারটি থেকে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। এই বড় অপারেশনগুলি মহাকুমা হাসপাতালে হয় না। এগুলি মেডিক্যাল কলেজের প্লাস্টিক সার্জারি ডিপার্টমেন্টে হয়। আপাতত ওই মহিলা সুস্থ রয়েছেন এবং তার হাত সচলভাবে কাজ করছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। আত্মদীপ বলেন,”৬ বছর ধরে ভুগছিলেন ওই মহিলা। তাঁর শরীরের ডানদিকের বগলের কাছে টিউমার ছিল। ইউএসজি, এমআরআই করে দেখা যায় সেটি পাঁজর পর্যন্ত রয়েছে। তবে শরীরের নার্ভ বা ভাল্বের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। সেটা দেখার পরেই আমরা অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিই। কিছুটা সাহস নিয়েই এই অস্ত্রোপচার করতে হয়েছিল আমাদের।”
হাসপাতালের সুপার সন্তু ঘোষ বলেন, “৫০০ গ্রাম ওজনের এক স্কয়ার ফুট ব্যাসার্ধের টিউমার কেটে বাদ দেওয়া হয়। কয়েকদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর সুস্থ হলে তাঁকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। একটা মহকুমার সরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামো এমন নেই যে এত বড় অপারেশনের ঝুঁকি নেওয়া যায়। এর পরেও হাসপাতালের চিকিৎসকরা সব রকম চেষ্টা করেছেন। সফল হয়েছেন।”
অস্ত্রোপচারের পর মিতা দেবী বলেন, “শরীরে বড় একটা টিউমার হয়েছিল। বাড়িতে প্রতিবন্ধী ছেলে থাকায় অপারেশনের করতে ভয় পাচ্ছিলাম। ভেবেছিলাম হোমিওপ্যাথি ওষুধ খেয়ে কমে যাবে। কিন্তু কিছুই হয়নি। পরে আমি চন্দননগর হাসপাতালে যোগাযোগ করি। চিকিৎসকরা আমার টিউমারটিকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে অপারেশন করেন। বর্তমানে আমি সুস্থ রয়েছি, চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানাই।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.