সুবীর দাস, কল্যাণী: গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছে অশরীরী। কখনও কাউকে ডাকছে জল আনতে যাওয়ার জন্য। কখনও খেলার সঙ্গী খুঁজছে। ফলে প্রতি মুহূর্তে মৃত্যু ভয় তাড়া করে বেড়াচ্ছে গ্রামবাসীদের। তাই বাধ্য হয়ে পুরোহিতের নিদান মেনে ঘরের বাইরে রাত কাটানো শুরু করলেন নদিয়ার কল্যাণীর ভুট্টা বাজারের বাসিন্দারা। নাগদেবীর মন্দির বানালেই মিলবে সমাধান, জানিয়েছেন ওই পণ্ডিত।
নদিয়ার কল্যাণীর ভুট্টাবাজার এলাকার বাসিন্দা সোনি নামে এক কিশোরী। জঙ্গলের মাঝে এক জলাশয়ের পাশে একটি ভাঙাচোরা বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে থাকত সে। জানা গিয়েছে, রবিবার গভীর রাতে সাপে কামড়ায় ওই কিশোরীকে। বিষয়টি বাবা-মাকে জানালেও তাঁরা সে বিষয়ে কর্ণপাত করেননি। এরপর ওই কিশোরী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। এরপর সোমবার বিকেলে কিশোরীর দেহ বাড়িতে নিয়ে আসেন পরিবারের সদস্যরা।
এরপর গ্রামবাসীরা তাঁদের জানান, সম্প্রতি ওই এলাকায় সাপে কামড়ানো এক রোগীকে উত্তরপ্রদেশের বালিয়ার আমেলেকা সতীমাতার স্থানে নিয়ে যাবার পর সে বেঁচে গিয়েছে। একথা শুনে সোনির পরিবারের সদস্যরা বিশ্বাস করতে শুরু করে যে, তাদের মেয়েকেও সেখানে নিয়ে গেলে সে বেঁচে যাবে। সেই আশায় মৃত মেয়েকে নিয়ে কল্যাণী থেকে উত্তরপ্রদেশের ওই স্থানের ঠিকানায় রওনা দেয় পরিবার। মঙ্গলবার কল্যাণীতে খবর আসে যে সোনির বেঁচে ওঠার আর কোনও আশা নেই।
এরপর বুধবার দুপুরে সোনির দেহ কল্যাণীতে ফিরিয়ে আনা হয়। এদিন বিকেলে ওই কিশোরীর দেহ সমাধিস্থ করা হয়। এরপর মেয়ের আত্মার শান্তির জন্য ভোলা পণ্ডিত নামে এলাকার এক পুরোহিতকে ডেকে আনে সোনির পরিবার। সেখানে গ্রামের আরও অনেকেই ছিলেন। সকলের সামনে ওই পণ্ডিত বলেন, “গ্রামে কু’নজর লেগেছে। আর ৪ জনের মৃত্যু হবে। ওই কিশোরীর আত্মা ঘুরে বেড়াচ্ছে এই এলাকায়। এই স্থানে কেউ বসবাস করতে পারবে না। ওই এলাকায় নাগদেবীর মন্দির বানাতে হবে। মূর্তি বসাতে হবে। পুজো করতে হবে।” এই কথা শোনা মাত্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সকলের মধ্যে। এরপর বুধবার রাতে ঘরের বাইরে একসঙ্গে সংঘবদ্ধভাবে রাত কাটান গ্রামবাসী ও মৃতের পরিবারের সদস্যরা।
গ্রামের এক বাসিন্দার কথায়, “আমাদের সন্তানদের সাথে খেলতো ওই কিশোরী। তার আত্মা এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে। বলা তো কখন আমাদের সন্তানদের ডেকে নিয়ে মেরে ফেলবে!” একজন নয়, গ্রামের সকলেরই এক মত। আতঙ্কের ছাপ সকলের চোখে মুখে স্পষ্ট। কিন্তু কতদিন এভাবে দিন কাটবে তা জানেন না তারাও। সুত্রের খবর, বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যেতে পারেন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা।কুসংস্কার আর মনের অন্ধবিশ্বাস দূর করতে আরও কত সময় অপেক্ষা করতে হবে, সেটাই এখন দেখার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.