চলছে আলতা পরার কাজ।
নবেন্দু ঘোষ, বসিরহাট: নদিয়ার পর এবার আলতা সিঁদুর পরার ধুম বসিরহাটের সন্দেশখালির ২ ব্লকের আতাপুর, মণিপুর, ধুসনিখালি-সহ বিভিন্ন এলাকায়। মণিপুরের এক যুবক মণীন্দ্র মিস্ত্রি জানান, তাঁর মা’কে বৃহস্পতিবার রাত তিনটের সময় ঘুম থেকে ডেকে তুলে আলতা সিঁদুর পরান পাশের বাড়ির কাকিমা বউদিরা। কারণ জানতে চাইলে স্থানীয় গৃহবধূ ইন্দ্রাণী মণ্ডল জানান, তাঁর বাড়িতেও এসে কিছু মহিলা রাতে ঘুম থেকে তুলে আলতা সিঁদুর পরিয়েছেন, সেই সঙ্গে জানিয়েছেন আরও তিনজনকে আলতা সিঁদুর পরাতে হবে। তাহলে পরিবারের মঙ্গল হবে। না হলে বিপদে পড়বে পরিবার। তাই সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে থাকা আলতা সিঁদুর নিয়ে ছুটে এসেছেন পাশের বাড়ির মায়ারানি মিস্ত্রিকে পরাতে।
যা শুনে বাড়ির শিক্ষিত যুক্তিবাদী ছেলে মণীন্দ্র জানতে চান, রাতেই আসতে হল কেন? উত্তরে ইন্দ্রাণী জানান, এটাই নাকি মায়ের আদেশ। কোন মা? কিসের আদেশ? আতাপুর, মণিপুর, ধুসনিখালি-সহ বিভিন্ন জায়গার মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, কোনও এক মহিলা নাকি স্বপ্ন দেখেছেন মা মনসা তাঁকে আদেশ দিচ্ছেন, “আলতা সিঁদুর নিজে পরো এবং আরও তিনজনকে পরাও রাতের বেলায়। তা না হলে পরিবারের ক্ষতি হবে।” কিন্তু সেই মহিলা নাকি তা মানেননি। তাই কয়েকদিনের মধ্যে তাঁর ছেলেকে সাপে কামড়ায় এবং মারা যায়। এরপর থেকে সেই মহিলা সিঁদুর ও আলতা অন্য তিনজনকে পরান এবং নিজে পরেন। আর সেটাতেই মজেছেন গোটা গ্রামের সধবা মহিলারা।
কিন্তু কে সেই মহিলা, যিনি আলতা সিঁদুর পরেননি বলে সাপের কামড়ে তাঁর ছেলেকে হারিয়েছেন? সেই মহিলার খোঁজ মেলেনি। যাঁর সঙ্গেই কথা হয়েছে, প্রত্যেকেই বলেছেন, তিনিও শুনেছেন। আর এভাবেই ঝড়ের গতিতে এক রাতেই গোটা মণিপুর, ধুসনিখালি পঞ্চায়েতের বিভিন্ন গ্রামের মহিলারা রাতে অন্য কারও কাছ থেকে আলতা সিঁদুর পরেছেন এবং আরও তিনজনকে পরিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে গ্রামে দেখা গেল, সব বিবাহিত মহিলাই সিঁদুর আলতা পরে ঘুরছেন। কিন্তু কীভাবে ছড়াল রাতারাতি এই গুজব? এর উত্তর সঠিকভাবে কেউই দিতে পারলেন না। তবে কারও আশঙ্কা, এর পিছনে মণিহারি দোকানের স্বার্থ লুকিয়ে থাকতে পারে। এই অঞ্চলে দুর্গাপুজোর সময় প্রচলন আছে আশপাশের মহিলারা নিজেদের মধ্যে আলতা সিঁদুর দেওয়া নেওয়া করেন। সেই সিঁদুর আলতা নিয়েই সবাই বেরিয়ে পড়েছিলেন একে অপরকে পরাতে।
এই বিষয় পোড়াকাঠি পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান শিবানী রাস্তান বলেন, তিনিও এমন আলতা সিঁদুর মাখানোর কবলে পড়েছিলেন বৃহস্পতিবার রাতে। তিনি জানান, সাত-আট বছর আগে গুজব ছড়িয়েছিল যে, ভাইয়ের থেকে শাড়ি আনতে হবে এবং সেই শাড়ি পরে কয়েকজন মহিলা মিলে পাড়ায়-পাড়ায় মনসা পুজো করতে হবে। এছাড়া কয়েক বছর আগে হয়েছিল ভাগনের কাছ থেকে শাড়ি আনতে হবে এবং সেই শাড়ি পরে মনসার পুজো দিতে হবে। এর কারণ হিসাবে স্থানীয় যুক্তিবাদী শিক্ষিত ব্যক্তিরা মনে করেন, গ্রামের মানুষের মধ্যে সাপের ভয় থাকে। সেই ভয় উসকে দিয়ে কিছু বছর পরপর বিভিন্ন গুজব সামনে আসে। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে দেখা গেল, মল্লিকা মণ্ডল, ইন্দ্রাণী মণ্ডল নামে কয়েকজন গৃহবধূ বলেন, “আমরা জানি এটা স্রেফ গুজব ছাড়া কিছু নয়। কিন্তু তবুও আলতা সিঁদুর পরছি ও পরিয়েছি তিনজনকে। নাহলে পরিবারের কোনও ক্ষতি হলে আমাদের দোষারোপ করবে সবাই।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.