দেবব্রত মণ্ডল, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: মাঝ সমুদ্রে ট্রলারডুবি এড়াতে এবার নয়া প্রযুক্তিই ভরসা। এই কাজে উদ্যোগ নিয়েছে ট্রলার মালিকরা। আধুনিক প্রযুক্তিতে ভরসা রেখে বেশ কয়েকটি কার্যকরী ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। খবর, প্রতিটি ট্রলারকে প্রযুক্তিগত ভাবে আধুনিক করতে যা খরচ পড়বে তার বেশিরভাগটাই বহন করবেন মালিকরা। তবে আধুনিকীকরণের কাজে যাবতীয় সরকারি সাহায্যের আশ্বাস পেয়েছেন ট্রলার মালিকরা। দক্ষিণ ২৪ পরগনা প্রশাসন সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য মৎস্যজীবীরা যে ট্রলার ব্যবহার করেন, তাতে অনেক প্রযুক্তিগত দুর্বলতা রয়েছে। এবার সেই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠে ট্রলারগুলিতে আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন হবে। ট্রলারের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জিপিএস প্রযুক্তির ব্যবহার হবে। মাঝসমুদ্রে গেলেই ট্রলারে লাগানো হবে ট্যাগ। কাকদ্বীপ থেকে কম্পিউটারের সাহায্যে গোটা বিষয়টি নিয়ন্ত্রিত হবে। সংশ্লিষ্ট ট্রলারগুলি উপকূল থেকে কত নটিক্যাল মাইল দূরে আছে তাও বোঝা যাবে। প্রতিটা ট্রলারকে পরিচালনা করার জন্য থাকছে একটি কন্ট্রোলিং সিস্টেম। যেখানে থেকেই ট্রলার গুলিকে বার্তা পাঠানো হবে। বর্তমানে ওয়্যারলেস ব্যবস্থার মাধ্যমেই সমুদ্রে থাকা ট্রলারের গতিবিঝি জানা যায়। সেই ওয়্যারলেসের সীমানা আবার সৈকত থেকে সমুদ্রের ২০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে। উল্লেখিত সীমানা পেরিয়ে গেলেই ট্রলারটির অবস্থান সম্পর্কে মালিক প্রশাসনের কেউই কিছু জানতে পারতেন না। এবার এই ব্যবস্থারই বদল হবে। ২০ কিলোমিটারের বদলে ব্যাসার্ধ হবে ১০০ কিলোমিটার। সীমানা বাড়াতে চাই উচ্চ প্রযুক্তি সম্পন্ন স্যাটেলাইট ফোন। যার একেকটির দাম প্রায় লক্ষাধিক টাকা। অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু বা কেরলের মৎস্যজীবীরা এগুলিই ব্যবহার করে থাকেন। বলা বাহুল্য, এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের যেকোনও সমুদ্র উপকূলের ট্রলারগুলির নিয়্ন্ত্রণের পরিধি ওই ২০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধেই আটকে রয়েছে। তাই গভীর সমুদ্রে ইলিশের ঝাঁক ধরতে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় রাজ্যের মৎস্যজীবীদের। ফলে দুর্ঘটনা ঘটলে খবর পেয়ে উদ্ধার করতে অনেক দেরি হয়ে যায়। এবিষয়ে ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনাইটেড ফিশারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, “আমরা চাইছি ট্রলারগুলির প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা বাড়ানো হোক। এজন্য যা খরচ হবে তা বহন করবেন ট্রলার মালিকরা। প্রতিটা গাড়িকে যে ভাবে আধুনিক জিপিএসের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে ট্রলারগুলিকে ও তাই করা হোক। এই ব্যবস্থা যাঁরা মানবেন না তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
উল্লেখ্য, বর্তমানে ট্রলারে রয়েছে ‘ড্যাড’ নামক একটি বিপদ সংকেত যন্ত্র। কোনও ট্রলার গভীর সমুদ্রে বিপদে পড়লে এই যন্ত্রের নির্দিষ্ট বোতামে চাপ দিলে সংকেত পৌঁছে যায় চেন্নাইয়ে। সেখান থেকে তা জানানো হয় ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনীর দপ্তর হলদিয়ায়। এই বিষয়ে মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, ট্রলার বিপদে পড়লে উপকূলরক্ষী বাহিনীর সাহায্য সবসময় পাওয়া যায় না। এমনকী, বাহিনীর তরফে দুর্ঘটনার বিষয়টি ভারতীয় নেভিকেও জানানো হয় না। ফলে উদ্ধারকার্যে অনেক দেরি হয়। তবে এবার সমুদ্রের ১০০ কিলোমিটারে মধ্যে বিপদ ঘটলেই তার সংকেত কাকদ্বীপে বসেই জানা যাবে। প্রতিটা ট্রলারে থাকবে লাইফ জ্যাকেট। এতদিন এই লাইফ জ্যাকেট সব ট্রলারে ছিল না। প্রতিটা ট্রলার লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে আগামী বৃহস্পতি ও শুক্রবার একটা অভিযান চলবে কাকদ্বীপ, নামখানাতে। সেখানকার প্রতিটা ট্রলারকে পরীক্ষা করে দেখা হবে। তারপর সরকারিভাবে সমুদ্রে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। এবিষয়ে সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী তথা কাকদ্বীপের বিধায়ক মন্টুরাম পাখিরা বলেন, ”প্রশাসন মৎস্যজীবীদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে সব থেকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। সেক্ষেত্রে ট্রলারের নিরাপত্তা, ইঞ্জিনের অবস্থা সবই দেখা হবে। প্রয়োজনে চালকদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.