লাল্টু হাজরা, প্রত্যক্ষদর্শী: আমি সাঁতরাগাছি স্টেশন থেকে পাঁচ মিনিট দূরেই থাকি। রোজই এই স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করি। এই সময়টা রোজ সাঁতরাগাছি স্টেশনে প্রবল ভিড় থাকে। আজও ব্যতিক্রম ছিল না। সেইসময় ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে চেন্নাই মেল দাঁড়িয়েছিল। ট্রেন ছিল ৩ ও ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে। স্টেশনে একাধিক ট্রেন এলেই রোজ ফুটব্রিজে এইরকম পদপিষ্ট হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। কারণ, বিকেলের দিকটায় প্রচুর নিত্যযাত্রী ফুটব্রিজের উপরে উঠে দাঁড়িয়ে থাকেন। ট্রেনের ঘোষণা হলেই তাঁরা দৌড়ে প্ল্যাটফর্মে নামার চেষ্টা করেন। আজও সেটাই ঘটেছিল। কিন্তু হঠাৎ ভিড়টা বেশি হয়ে যায়। এই সময়ে হঠাৎ দেখলাম ফুটব্রিজের সিঁড়িতে হুড়োহুড়ি। আরপিএফের কয়েকজন লোক কিছু যাত্রীকে ধাক্কা দিয়ে ফুটব্রিজ থেকে নামানোর চেষ্টা করছিল। এতেই দেখলাম আরও ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে গেল। অনেকে রেলিং ধরে ঝুলে পড়েছিল। আমি কোনওরকমে ফুটব্রিজের নিচে একটা কোণায় গিয়ে দাঁড়ালাম।
[সাঁতরাগাছি দুর্ঘটনায় রেলকে দুষলেন মুখ্যমন্ত্রী, ক্ষতিপূরণ ঘোষণা]
গায়ের উপর ক্রমাগত এসে ভিড় ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়ছে। একসময় ভয় হচ্ছিল আমিও বুঝি পদপিষ্ট হয়ে যাব। ওই সময় আশেপাশে প্রচুর লোককে প্ল্যাটফর্মে ধাক্কা সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে দেখছিলাম। প্রচুর মহিলা ও বাচ্চাও প্ল্যাটফর্মে ভিড়ের ধাক্কায় পড়ে যাচ্ছিল। চেন্নাই মেল দাঁড়ানোয় অনেক রুগীও ছিলেন। টানা আধঘণ্টা এই ধাক্কাধাক্কি চলার পর ভিড়টা আস্তে আস্তে যেন সরল। ততক্ষণে বহু মানুষ গুরুতর জখম হয়ে গিয়েছেন। একসময় আমারও নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছিল। কীভাবে যে বেঁচে ফিরলাম, তা ভেবেই এখন অবাক হচ্ছি। এইরকম পরিস্থিতি যে হতে পারে তা আমার কখনও কল্পনাতেও ছিল না। পুজোর পর বাইরে রাস্তাঘাট অপেক্ষাকৃত ফাঁকা। সরকারি ছুটি থাকায় লোকাল ট্রেনেও ভিড় কম। পুজোর আগে স্টেশনগুলিতে যেরকম যাত্রীদের চাপ থাকে এখন সেটাও নেই। তবুও এইরকম একটা পদপিষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো ভিড় হঠাৎ করে কেন হল তা জানি না। একসঙ্গে সাঁতরাগাছির তিনটি প্ল্যাটফর্মে ট্রেন আগেও দেখেছি। কিন্তু এই ধরনের হুড়োহুড়ি কখনও দেখিনি। একসঙ্গে ট্রেনের ঘোষণা হচ্ছিল বলেই কী সবাই হঠাৎ ফুটব্রিজে উঠতে শুরু করে দেন? জানি না। হয়তো সেটাই কারণ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.