অভিরূপ দাস: যাও বা ক’দিনের জন্য খুলেছিল বড়দের স্কুল। তৃতীয় ঢেউয়ের আঘাতে ফের বন্ধ। এদিকে বাগদেবীর আরাধনায় হপ্তা তিনেকও বাকি নেই। প্রতিমা বিক্রি নিয়ে কপালে ভাঁজ কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীদের।
দু’একটা থিমের সরস্বতী পুজো (Saraswati Puja) বাদ দিলে, দশভুজার সঙ্গে বাণীবন্দনার ফারাক বিস্তর। দুর্গাপুজোর (Durga Puja) মতো সরস্বতীর অগ্রিম বরাত হয় না। আগেভাগে থরে থরে প্রতিমা বানিয়ে রাখেন শিল্পীরা। ফি বছর স্পটে প্রতিমা পছন্দ করে ‘রেডিমেড’ কিনে নিয়ে যায় ছাত্রছাত্রীরা। মাঝে করোনা সংক্রমণ থিতু হওয়ায় নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির স্কুল খুলে গিয়েছিল। কিন্তু ফের তৃতীয় ঢেউয়ের লাগামছাড়া সংক্রমণ তালা পড়েছে স্কুলের গেটে। কুমোরটুলি মৃৎশিল্প সাংস্কৃতিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক রঞ্জিত সরকার জানিয়েছেন, কুমোরটুলিতে ১১০টা দোকান ঘরে সরস্বতী তৈরি হয়। প্রতি বছর প্রতিটি দোকান ঘরে নূন্যতম ১০০টা ঠাকুর তৈরি হয়। এবার তার অর্ধেকও হবে না।
রঞ্জিতবাবুর কথায়, “দ্বিতীয় ঢেউ থিতু হওয়ার পর আশায় বুক বেঁধেছিলাম। কিন্তু তৃতীয় ঢেউ আশায় জল ঢেলেছে। আবার স্কুল কলেজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পুজোর জন্য তো আর আলাদা করে খুলবে না।” বাড়ি আর ক্লাবের পুজোর উপরে তাই ভরসা করছেন অনেক মৃৎশিল্পী। শিল্পী সুজিত পাল জানিয়েছেন, “স্কুল বন্ধ থাকায় অভিভাবকরা বাড়িতে পুজোর উপর জোর দেবেন। বাড়ির ঠাকুর যদিও আকারে অনেক ছোট, তবু তো কিছু বিক্রি হবে।”
অন্যান্যবার নানা ধরনের ঠাকুর বানিয়ে রেখে দেওয়া হয়। এসে পছন্দ করেন ক্রেতা। স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় দুটো তিনটের বেশি ঠাকুর বানাতে ভয়ই পাচ্ছেন শিল্পীরা। “বিক্রি না হলে শুধু শুধু গোডাউন ভরতি হবে।” জানিয়েছেন সনাতন পাল। যে সনাতন গেল বছরও পঞ্চাশটা প্রতিমা বানিয়েছিলেন এবার তিনি দশটার বেশি বাগদেবী তৈরি করছেন না। আশা আশঙ্কার দোলাচলে শেষ ভরসা প্রাইভেট টিউশনের কেন্দ্রগুলো। ভিনরাজ্য থেকেও অগুনতি মানুষ ফি বছর সরস্বতী নিতে আসতেন কুমোরটুলিতে। পড়শি বিহারে যেত প্রায় গোটা শয়েক প্রতিমা। এই মুহূর্তে বিহারে দৈনিক করোনা সংক্রমণ সাড়ে বারো হাজারের উপর। প্রতিমা শিল্পী সুজিত পাল জানিয়েছেন, বিহার থেকে কেউ তেমন আসবে বলে মনে হয় না।
বিক্রিবাটা তলানিতে ঠেকলেও প্রতিমা বানানোর কাঁচামালের দাম কমেনি। বরং আকাশ ছুঁয়েছে। গত বছরও একটা বাঁশের দাম ছিল ১০০ টাকা। এবার পিস প্রতি দাম বেড়েছে ৪০ টাকা। এক অবস্থা খড়েরও। নতুন ধান ওঠায় এই মুহূর্তে সামান্য হলেও কমেছে খড়ের দাম। মৃৎশিল্পী বিশ্বনাথ পাল জানিয়েছেন, “গত বছর এক মোট খড় ছিল দেড়শো টাকা। এবার সেটাই ৩০০। যদিও এই মুহূর্তে নতুন ধান ওঠায় খড়ের দাম সামান্য কমেছে।” মিল-কারখানা বন্ধ থাকায় দড়ির দামও চড়া। লকডাউনের আগে প্রতি কেজি দড়ির দাম ছিল পঁচাত্তর থেকে আশি টাকা। এই মুহূর্তে তা-ই ১১০ টাকা। অগ্নিমূল্য দিয়ে কাঁচামাল কিনে ঠাকুর তৈরি করে ফেলে রাখার কথা ভাবতেও পারছেন না মাটির কারিগররা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.