সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: ভূগোল বিষয়ক শিক্ষামূলক ভ্রমণে উত্তরবঙ্গে গিয়ে আটকে পড়েছিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার উস্তির একটি উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে চলা আন্দোলনের জেরে বাতিল হয় তাঁদের ফেরার ট্রেন। উপায়ান্তর না দেখে বাধ্য হয়েই তাঁরা ফোন করেন ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির নির্দিষ্ট ফোন নম্বরে। আর তাতেই কেল্লাফতে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের জন্য সরকারি বাসের ব্যবস্থা করে দেয় প্রশাসন। মঙ্গলবার সকালে নির্বিঘ্নেই সেই বাসেই কলকাতায় ফেরেন সকলে।
গত ১৩ ডিসেম্বর দক্ষিণ ২৪ পরগনার উস্তির সরাচি অম্বিকাচরণ হাইস্কুলের (উচ্চমাধ্যমিক) ৪৫ জন ছাত্র-ছাত্রীকে নিয়ে ১৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ভূগোল বিষয়ক শিক্ষামূলক ভ্রমণে বের হন। উত্তরবঙ্গের সিলারিগাঁও, লাভা, রিশপ, ইচ্ছেগাঁও ঘুরে সোমবার রাতেই দার্জিলিং মেলে ফেরার কথা ছিল তাঁদের। কিন্তু সংশোধিত নাগরিকত্ব সংশোধন আইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলনের জেরে বাতিল করে দেওয়া হয় দার্জিলিং মেল। স্টেশনে এসে সে খবর শুনেই মাথায় হাত শিক্ষক-শিক্ষিকা-সহ বেড়াতে যাওয়া সকল ছাত্র-ছাত্রীদের। খবর শুনে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন অভিভাবকেরাও।
তখনই ট্যুরের মূল দায়িত্বে থাকা শিক্ষক সঞ্জয় দাস যোগাযোগ করেন তাঁর পরিচিত বন্ধুদের সঙ্গে। খবর যায় দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি অমিত সাহার কাছে। অমিতবাবু তাঁকে ‘দিদিকে বলো’তে সমস্যার কথা জানানোর জন্য ফোন নম্বর দেন ও যোগাযোগ করতে বলেন। ফোনে সমস্যার কথা জানানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রশাসন আটকে পড়া ওই ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ঘরে ফেরার জন্য উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার একটি বাসের ব্যবস্থা করে দেয়। সেই বাসে চড়েই মঙ্গলবার বেলা এগারোটা নাগাদ তাঁরা কলকাতায় আসেন।
এদিন কলকাতা থেকে যে যার বাড়িতে ফিরে রীতিমতো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির তারিফও করেছেন সকলে। স্কুলের সভাপতি অমলেন্দু ঘাটা, প্রধানশিক্ষক নবদ্বীপ হালদার সরকারি এই তৎপরতায় যারপরনাই খুশি। ট্যুরে অংশ নেওয়া স্কুলেরই শিক্ষক কৌশিক দাস জানান, “এদিনই আমরা টের পেলাম কতখানি বাস্তব ভিত্তি রয়েছে এই ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির।”
শিক্ষামূলক ভ্রমণের মূল দায়িত্বে থাকা স্কুলের শিক্ষক সঞ্জয় দাস বলেন, “সোমবার বিকেল চারটে নাগাদ যখন শুনলাম দার্জিলিং মেল বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে, তখন আমরা সেবক থেকে ট্রেন ধরতেই স্টেশনে আসছিলাম। পথে যানজটে দীর্ঘক্ষণ আটকা পড়ে যাই। একদিকে ট্রেন বাতিল হওয়ায় চিন্তা ছিলই, তার ওপর অসহ্য যানজটে দীর্ঘক্ষণ আটকে বসে থাকা। কী করব কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। এতগুলো ছাত্র-ছাত্রীকে নিয়ে যেন অথৈ জলে পড়েছিলাম। শিলিগুড়ির বাসিন্দা বন্ধু বিকাশ দাসের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে বিকাশই উদ্যোগী হয়ে বিষয়টি জানায় দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি অমিত সাহাকে। অমিতবাবু আমাকে ফোন করে ‘দিদিকে বলো’র নম্বর দেন এবং পুরো বিষয়টি সেখানে জানানোর পরামর্শও দেন। ওই নম্বরে ফোন করতেই আধিকারিকরা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে আমার সমস্ত কথা শোনেন এবং উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শও দেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই জানতে পারি উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার একটি বাস সাতাশ হাজার টাকা ভাড়ায় আমাদের কলকাতায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। তখনই স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় সেই যানজট কাটিয়ে আমরা কোনওরকমে বাসস্ট্যান্ডে আসি। মঙ্গলবার ওই বাসেই নির্বিঘ্নে কলকাতায় পৌঁছাই আমরা।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.