সংগ্রাম সিংহরায়, শিলিগুড়ি: সরকার থেকে এখনও কোনও সাহায্য পাননি। যা জোগাড় হয়েছে, তা সমস্তই শুভানুধ্যায়ীদের হাত ধরে। কেউ দিয়েছেন পাঁচশো, কেউ হাজার। কেউ দশ এমনকি কুড়ি হাজার। সবই দু’হাত পেতে গ্রহণ করেছেন তিনি। তিনি সবার পরিচিত অ্যাম্বুল্যান্স দাদা করিমুল হক। মালবাজার ব্লকের রাজাডাঙায় তাঁর নিজের পৈত্রিক জমিতে স্বপ্নের প্রকল্প দাতব্য ‘মানব সেবাসদন’-এর জন্য অর্থের জোগাড় করছেন ছুটে ছুটে। সরকারি সাহায্য পেলে একবারে সমস্তটার সুরাহা হয়ে যেত, কিন্তু পাননি। তবে তার জন্য বসে থাকতে নারাজ তিনি। তিনি বলেন, “আমি মানুষের পাশে দাঁড়াই। মানুষ আমার পাশে দাঁড়াবে। এটা আমার বিশ্বাস। তাছাড়া এসব মানুষের জন্যই। তাই আশা করছি সকলে আমার পাশে থাকবে। একটি সময় লাগবে, কিন্তু নিশ্চিত তা দ্রুত রূপায়ন হবে।”
সোমবার শিলিগুড়িতে তাঁর হাতে দশ হাজার টাকা তুলে দিলেন শহরের পরিচিত তরুণ সংঘ ক্লাব। টিএস নামে কালীপুজোর জন্য যারা উত্তরবঙ্গে বিখ্যাত। খরচ থেকে সামান্য অংশ বাঁচিয়ে তারা করিমুলবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, তাঁর স্বপ্নের হাসপাতাল সেবাসদনে কিছু সাহায্য করতে চান জানিয়ে। সাহায্য নিতেই এদিন ছুটে এসেছিলেন করিমুলবাবু। প্রতিটি সাহায্যই যে তাঁর কাছে এক একটা ইটের সমান, তা নির্দ্বিধায় জানিয়ে দিলেন তিনি। এদিন টিএস ক্লাবকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি তিনি এমন ভাবেই শিলিগুড়িবাসীর কাছে আহ্বান জানান তাঁর পাশে দাঁড়ানোর জন্য। অন্যদিকে, টিএস ক্লাবের তরফ থেকে পরিমল সাহা তাঁর হাতে দশ হাজার টাকা-সহ পরিবারের জন্য কিছু টি-শার্ট তুলে দেন দুঃস্থ শিশুদের জন্য।
অ্যাম্বুল্যান্স দাদা জানান, এখনও পর্যন্ত তাঁর সব মিলিয়ে জোগাড় হয়েছে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা। তাঁর নিজস্ব জমি দান করেছেন তিনি। তাঁর স্বপ্নের দাতব্য সেবাসদনের জন্য আপাতত তৈরি হয়েছে একটি তলা। তাতেই ফি-রোজ বসছে দাতব্য চিকিৎসালয়। সেখানে আরও দু’টি তল করার ইচ্ছা রয়েছে তাঁর। প্রথম তলে থাকবে হাসপাতাল। দ্বিতীয় তলে তিনি করতে চান বৃদ্ধাশ্রম। যদিও বৃদ্ধাশ্রম শব্দটি তাঁর পছন্দ নয়। তবু যাঁদের ছেলে-মেয়ে নেই, কিংবা ছেলে–মেয়ে মারা গিয়েছেন, তাঁদেরই একমাত্র তিনি সেখানে ঠাঁই দেবেন বলে ঠিক করেছেন। এখনই ১৭ জন বৃদ্ধা জোগাড় হয়ে গিয়েছে তাঁর। পাশাপাশি একদম উপরের তলে তিনি অতিথিশালা করতে চান। যাঁরা লাটাগুড়ি-গরুমারা ঘুরতে আসবেন, তাঁরা ওই অতিথিশালায় থাকতে পারেন। এতে বাইরের হোটেল-রিসর্ট এর চেয়ে কম ভাড়ায় থাকতে পারবেন যে কোনও লোক। এই অর্জিত টাকা ব্যয় হবে তাঁর হাসপাতালের জন্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.