সংগ্রাম সিংহরায়, শিলিগুড়ি: ঘুটঘুটে অন্ধকারে তালা ভেঙে হেঁশেলে পা রাখতে নাকে আসে মাংসের গন্ধ। মন আনচান করে ওঠে। কিন্তু আলো জ্বালবে উপায় নেই। পাছে যদি কেউ টের পেয়ে যায়। টর্চ জ্বেলে পা টিপে মিটকেসের পাল্লাটা খুলতে পাগল হওয়ার জোগার। আধ গামলা মুরগির কষা মাংস। পাশেই ভাতের হাড়ি। তখনও কিছুটা গরম। আর অপেক্ষা না করে ঝুড়িতে সাজিয়ে রাখা একটি স্টিলের থালা নিয়ে ভাত বেড়ে নেয় সে। কব্জি ডুবিয়ে মুরগির ঠ্যাং চিবিয়ে ভুড়ি ভোজ সেরে ঢেকুর তুলে কাজে লেগে যায়। এমনই রসিক চোরের হানার ঘটনায় চাঞ্চল্য শিলিগুড়ির আশিঘর পুলিশ ফাঁড়ির ফকদই বাড়ি এলাকায়।
রাতে গৃহকর্তা নির্মল মজুমদার টের পেয়েছেন ঠিকই কিন্তু ততক্ষণে চোর গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে পগারপার। এমন অভিনব চুরির ঘটনায় অবাক আশিঘর ফাঁড়ির ওসি মহেশ সিং। তিনি বলেন, “ভুড়ি ভোজ করে রসিয়ে চুরি করেছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।” বর্মণ পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্মলবাবু খুটখাট শব্দ পেলে কেউ বাথরুমে গিয়েছে মনে করে তেমন গুরুত্ব দেননি। তাঁর কথায়, “রাত তখন সওয়া দু’টো হবে। মনে হল কেউ বাথরুমে গিয়েছে। তবে অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর কাউকে বের হতে না দেখে সন্দেহ হয়। ঘরে আলো জ্বালতেই দেখি রান্না ঘরের দরজা খোলা।”
[এবার বিশ্ববিদ্যালয়েও ইউনিফর্ম পরে যেতে হবে পড়ুয়াদের!]
এরপরই শুরু করেন হইচই। বাড়ির লোকজন রান্না ঘরে গিয়ে দেখে বাসনপত্র এলোমেলো অবস্থা পড়ে আছে। হাঁড়িতে ভাত নেই। গামলায় রাখা মাংস উধাও। কেউ যে মেছেতে বসে আয়েস করে খেয়েছে সেটা স্পষ্ট। এরপরই নজরে আসে দু’টি গ্যাস সিলিন্ডার নেই। তখন বুঝতে অসুবিধে হয়নি কী ঘটেছে। কিন্তু চুরি করতে এসে এভাবে গুছিয়ে ভাত খেয়ে যাবে চোর সেটা কিছুতেই বিশ্বাস করে উঠতে পারছিলেন না। নির্মলবাবু জানিয়েছেন, তিনটি ঘরের জানালা খোলে চোর। সন্দেহ তাঁর ঘরেও ঢুকেছিল। কিন্তু তিনি টের পেয়ে যাওয়ায় ঝুঁকি নেয়নি। শোওয়ার ঘর থেকে কেটে পড়ে।
[সাগরে ফুঁসছে ‘তিতলি’, প্রমাদ গুনছে পুজোর বাংলা]
ঘটনার খবর পেয়ে এলাকার প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলের শচীন বর্মণ বলেন, “পুজো আসতে চোরের উপদ্রব বেড়েছে। তবে খাবার খেয়ে গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে চম্পট দেওয়ার ঘটনা এর আগে শুনিনি। এমনটা চলতে থাকলে রাতে ঠিক মতো ঘুমোতে পারবে না কেউ।” ডাবগ্রাম-২ পঞ্চায়েত প্রধান সুধাসিংহ রায় বলেন, “কিছুদিন আগে শান্তিনগরে কয়েকটি বাড়িতে চুরি হয়েছে। এবার ফকদই বাড়িতে হল। পুলিশকে নজরদারি বাড়াতে অনুরোধ করেছি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.