সন্তানদের সঙ্গে সীমা দেবী। নিজস্ব চিত্র
সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: সংসারে নিত্য অভাব। চোয়াল শক্ত করে হাল ধরে রেখেছেন সীমা প্রধান। স্বামী প্রায় সাত বছর আগে মারা গিয়েছেন। তারপর থেকে সংসার চালাতে, ছেলেমেয়েদের বড় করার জন্য তিনিই কাজ শুরু করেন। কখনও পানের বরজে কাজ। কখনও শাড়ি বিক্রি করে সংসার চালানো। অভাবের সংসারে দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে প্রতিষ্ঠিত করাই একমাত্র লক্ষ্য তাঁর। মেজ মেয়ে সায়নী এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় দারুণ ফল করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। সব বিষয়ে লেটার মার্কস পেয়েছে সে। অধ্যাপক হতে চায় সায়নী। মেয়ের স্বপ্নকে বাস্তব করতে মরণপণ করতেও রাজি সীমা দেবী। আজ রবিবার আন্তর্জাতিক মাতৃদিবস। কিন্তু সেসব তাঁর মন ছুঁয়ে যায় না। কীভাবে সংসার চলবে, সেই চিন্তাতে এদিনও রোজগারের পথ খুঁজছেন তিনি।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরের বামনখালি এলাকার বাসিন্দা ওই পরিবার। খড়ের চালের মাটির বাড়িতে ছোটবেলা কাটলেও আবাস যোজনায় পাওয়া সায়নীদের এখন অ্যাসবেস্টসের চাল ঘেরা একতলা ইঁটের ঘর। বাবা বিকাশ প্রধান চাষবাস করতেন। সায়নী যখন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী, তখন তার বাবা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল সোমা দেবীর। তারপর থেকেই সংসারে প্রবল অভাব শুরু হয়। চোয়াল, কাঁধ শক্ত করে সংসারের হাল ধরেন মা। ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে কোমর বাঁধেন তিনি। কখনও অন্যের পানবরজে কাজ করে, কখনও ছোট্ট মুদিখানার দোকান চালিয়ে, কখনও গ্রামে গ্রামে শাড়ি বিক্রি করে ছেলেমেয়েদের মানুষ করে তুলছেন তিনি। পানবরজে কাজ করে তাঁর রোজগার হয় ২০০-২৫০ টাকা। দোকানও তেমনভাবে চলে না। শাড়ি বিক্রিতে সামান্য কিছু রোজগার। তার মধ্যেই বড়মেয়েকে গ্রাজুয়েট করে সম্প্রতি বিয়ে দিয়েছেন। সায়নী এবার উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো ফল করেছে। ছোট ছেলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। সেও ভালো ছাত্র বলে পরিচিত।
স্বামীহারা সীমা নিদারুণ দারিদ্র্যকে উপেক্ষা করেও ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় কোনওদিন কার্পণ্য করেননি। উচ্চমাধ্যমিকে মেয়ের সাফল্যে গর্বিত তিনি। বামনখালি এমপিপি হাইস্কুলের সায়নী উচ্চমাধ্যমিকে কলাবিভাগে ৪৫৮ নম্বর পেয়েছে। প্রত্যেকটি বিষয়ে সে লেটার মার্কস পেয়েছে। তার এই সাফল্যে খুশি স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক সৌমিত্রকুমার দাস-সহ অন্যান্য শিক্ষকরাও। কোনও প্রাইভেট টিউটর ছাড়াই এই ফল করেছে সে। পড়াশোনার ফাঁকে ঘরেই মায়ের সঙ্গে দোকানও চালাতে হয় সায়নী ও তার ভাইকে। মেয়ের সাফল্যে সীমা দেবীর চোখে জল। তিনি বলেন, “মেয়ের এত ভালো রেজাল্টে খুবই আনন্দ হচ্ছে। কিন্তু শেষপর্যন্ত ওর অধ্যাপিকা হওয়ার স্বপ্ন কতটা পূরণ করতে পারব জানি না। এমনিতেই সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। একা আর পেরে উঠছি না। যদি কোনও সহৃদয় ব্যক্তির বা সরকারি সাহায্য পাই তবে খুবই ভালো হয়।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.