ছবি: প্রতীকী
দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: ঘুমের মধ্যে সাপের কামড় (Snake Bite) খাওয়া তরুণীকে রাতভর ঝাড়ফুঁক করেও বাঁচানো গেল না। বরং ওঝার কেরামতিতে সকালের দিকে মৃত্যু হল দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবার (Gosaba, South 24 Parganas) পাঠানখালি গ্রামের তরুণী শ্যামলী সরদারের। আর এই ঘটনা সর্প দংশন নিয়ে জনসচেতনতার অভাবটাকেই ফের প্রকট করে তুলল।
কোনওভাবে ঘরে ঢুকে বিছানায় উঠে গিয়েছিল বিষাক্ত কালাচ। রাতের অন্ধকারে তা ছোবল মারে শ্যামলীকে। যন্ত্রণায় কাতরে ওঠেন তিনি। প্রথমে বুঝতে না পারলেও, হাতে কামড়ের দাগ দেখে প্রতিবেশীরা টের পান, ওটা সর্প দংশনের চিহ্ন। তাঁরা শ্যামলীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু পরিবারের সদস্য তাতে কর্ণপাত করেননি। এক ওঝার কাছে তাঁরা নিয়ে যান মেয়েকে। তিনি রাতভর ঝাড়ফুঁক করে সাপের বিষ ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করতে থাকেন। খাওয়ানো হয় বিভিন্ন রকমের গাছের শিকড়। ঝাড়ফুঁক অবস্থাতেই তরুণীর শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। বাড়িতেই কয়েকবার বমি করেন তিনি।
এভাবেই কেটে যায় রাত। পরিস্থিতি ক্রমশ হাতের বাইরে চলে যেতে থাকলে বেগতিক বুঝে পালিয়ে যান ওঝা। শনিবার ভোরে তরুণীকে নিয়ে আসা হয় ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে। চিকিৎসকরা তাঁকে পরীক্ষা করে মৃত বলে ঘোষণা করেন। দেহটি পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ”ওঝার কাছে নিয়ে গেলে সুস্থ হবে মেয়ে, এই ভেবেই নিয়ে গেছিলাম।” কিন্তু সুস্থ হওয়া দূরঅস্ত, বাঁচানোই গেল না তাঁকে।
এ নিয়ে ক্যানিং হাসপাতালে সর্প বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সমর রায় বলেন, “বিভিন্ন ভাবে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করা হলেও, সাপের কামড় নিয়ে মানুষের সচেতনতার অভাবেই এই ঘটনা ঘটছে। হাসপাতালগুলিতে যথেষ্ট পরিমাণে সাপে কামড়ানোর প্রতিষেধক এভিএস (AVS) মজুত আছে। তার সত্বেও গ্রামের লোকজন ওঝা, গুণিনদের উপরেই ভরসা করছেন। ফলে ঘটছে মৃত্যুর ঘটনা।” ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে সুপার চিকিৎসক অপূর্ব লাল সরকার বলেন, “প্রাথমিকভাবে দেখে মনে হয়েছে বিষধর সাপ কালাচের কামড়ে মৃত্যু ঘটেছে। সাপে কামড়ালে ওঝা-গুনিন নয়, হাসপাতালের উপর মানুষের ভরসা তৈরি হওয়া উচিত। আর তাহলে কমানো যাবে মৃত্যুর ঘটনা।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.