সংগ্রাম সিংহরায়, শিলিগুড়ি: পেটের টানে শিলিগুড়ি পৌঁছে ভাগ্য ফিরল এক কিশোরের। অর্থের জন্য যার পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম, সাফল্যের সঙ্গে মাধ্যমিক পাশ করল সে। আর এই লড়াইয়ে বাবা, মা ছাড়াও তাঁর পাশে যিনি ছিলেন, তিনি একজন সমাজকর্মী। তাঁর আর্থিক সাহায্যেই সাফল্য পেল শুভজিৎ।
একই যারা পেশাগতভাবে ঢাকি, আর্থিক অনটন তাঁদের নিত্যসঙ্গী। সেই কারণেই বছর দুয়েক আগে পুজোর ছুটিতে বাবার সঙ্গে শিলিগুড়ি পাড়ি দিয়েছিল শুভজিৎ। অতিরিক্ত রোজগারের আশায় ঘুরতে ঘুরতে তাঁরা হাজির হয়েছিলেন শিলিগুড়ির একটি পুজো মণ্ডপে। কিশোর ঢাকির বাজনা শুনে মুগ্ধ পুজো কমিটির আয়োজকরা কথা বলেছিলেন শুভজিতের সঙ্গে। তখনই তাঁরা জানতে পারেন শুভজিতের আর্থিক অবস্থার কথা। এরপরই পুজো কমিটির অন্যতম পৃষ্ঠপোষক তথা শিলিগুড়ির সমাজকর্মী মদন ভট্টাচার্য শুভজিতের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী শুভজিতের যাবতীয় খরচ দেওয়ার আশ্বাসও দেন তিনি। শিলিগুড়িতে থাকাকালীনই ওই পড়ুয়ার হাতে বই, খাতা-সহ অন্যান্য সামগ্রীও তুলে দেন তিনি। সেই শুরু। এরপর আর পড়াশোনার জন্য পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ওই কিশোরকে।
উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের শেরগ্রাম হাইস্কুল থেকে এবছর মাধ্যমিকে পাশ করেছে শুভজিৎ। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৭০। বাংলা, ইংরেজি এবং গণিত তিনটিতে ৬৭ পেয়েছে সে। ভৌতবিজ্ঞানে তার প্রাপ্ত নম্বর ৬১, জীবনবিজ্ঞানে ৭৫। ইতিহাসে ৭০, ভূগোলে ৬৭। ভবিষ্যতে শিক্ষকতা করতে চায় সে। শুভজিৎ জানিয়েছে, “মদনবাবুর সহায়তা পেয়েছি বলেই পড়াশোনা করতে সুবিধা হয়েছে। তিনি না থাকলে এত সহজে সবটা পারতাম না।” খুশি শুভজিতের বাবা সমীরবাবুও। তিনি জানান, “সাহায্য পেয়েছি বলেই ছেলে মাধ্যমিক পাশ করেছে। ওঁনাকে ধন্যবাদ।”
উচ্চমাধ্যমিকেও ওই কিশোরের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন শিলিগুড়ির ওই সমাজকর্মী। তিনি বলেন, “শুভজিতের মতো আরও বেশ কিছু ছাত্রছাত্রীকে আমি সাহায্য করি। শুধুমাত্র অর্থের অভাবে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে এই বিষয়টা মেনে নিতে পারি না, তাই।” তাঁর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে সকলেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.