ধীমান রায়, কাটোয়া: মাথায় ঝুঁটি, ময়ূরপুচ্ছ, কণ্ঠে মণিহার, পরনে ঝলমলে পোশাক আর কচি আঙুলের মাঝে একটুকরো সুর তোলা বাঁশি। এতগুলো হলে তবে বইয়ে দেখা কৃষ্ণ কিশোরের সঙ্গে চেহারাটা মিলে যেত। কিন্তু বর্ধমানের ভাতারের ১৩ বছরে বিদ্যুৎ বালা বাবার কাছে বায়না করে এতগুলোর কোনওটাই পায়নি। বাড়ির পাশের রাসমেলায় কী করেই বা যাবে? মন খারাপ করে এক বছর আগে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিল বিদ্যুৎ। কিন্তু শিকড়ের টানে অবশেষে ফিরেছে বাড়িতে। ১ বছর ২ মাস পর।
চার মেয়ে, দুই ছেলেকে নিয়ে ভাতারের ওড়গ্রামের রমনীকান্ত বালার সংসার। তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। গেঞ্জি কারখানার কর্মীর পক্ষে কনিষ্ঠ পুত্র, কন্যা, স্ত্রীর সংসার খুব স্বচ্ছলভাবে চালানো সম্ভব নয়। কৃষ্ণ সাজতে চাওয়া ছোট ছেলে বিদ্যুতের আবদার তাই পূরণ করতে পারেননি তিনি। রমনীকান্তর কথায়, ‘যেদিন ছেলে নিখোঁজ হয়, তার আগের দিন ছিল রাস উৎসব। বাড়ির অদুরে কাঁঠালডাঙা গ্রামে রাসের মেলা হয়। বিদ্যুৎ ছোট থেকেই মেলায় কৃষ্ণ সাজে। সেবারও কৃষ্ণ সাজার মন ছিল। আমাকে পোশাক কিনে দিতে বলছিল। কিন্তু টাকার অভাবে পারিনি। তাই ছেলে অভিমান করে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।’ সেটা ছিল ২০১৭ সালের ৭ নভেম্বর।
তমলুকের বৈকুণ্ঠ ধামে সংরক্ষিত ‘নেতাজির চেয়ার’
পরিবার সূত্রে খবর, বিদ্যুৎ হারিয়ে যাওয়ার পর তার সন্ধানে বিভিন্ন আত্মীয়ের বাড়িতে খোঁজ নিয়েছিলেন বাড়ির সকলে। কয়েকদিন পর নিখোঁজ ডায়েরি করা হয় ভাতার থানায়। তারপর থেকে পুলিশও তার সন্ধানে নামে। কিন্তু খুঁজে পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি জানা যায়, বাগনানের একটি হোমে বিদ্যুতের খোঁজ মিলেছে। বাড়ি ফেরার পর ১৩ বছরের ছেলেটি জানিয়েছে, বাড়ি থেকে পালানোর পর তিন দিন হাওড়া স্টেশনেই কাটিয়েছিল সে। সেখানে রেল পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। তারপর হোমে পাঠানো হয়। তবে হোমে থাকাকালীন তার বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করেনি। তাই তার নাম, ঠিকানা ঠিক করে কাউকে বলেনি। তবে এতদিন পর অভিমান ভেঙেছে। নিজেই গিয়ে হোম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিদ্যুৎ। জানায়, ‘আমি বাড়ি ফিরে স্কুলে ভরতি হতে চাই।’
গভীর রাতে শুটআউট, আলিপুরদুয়ার ও রায়গঞ্জে খুন ২ তৃণমূল কর্মী
এরপর বাগনানের হোমের তরফে ভাতার থানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, মিলে যায় সব সূত্র। মঙ্গলবার রাতে তাকে গ্রামে ফেরায় পুলিশ। বুধবার বর্ধমান আদালতে হাজির করানো হয়। আদালতের নির্দেশেই স্বজনদের কাছে ফিরতে পেরেছে বিদ্যুৎ বালা। কৃষ্ণ সাজতে না পেরে বাবা, মায়ের প্রতি ছেলের অভিমান মুছে যাওয়ায় ১ বছর ২ মাস পর সুখের মুখ দেখছে বালা পরিবার।
ছবি: জয়ন্ত দাস
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.