অভিষেক চৌধুরী, কালনা: মহাকাব্য মহাভারত তাঁর মুখস্থ। বিভিন্ন চরিত্র, ঘটনাবলিও বলছেন গড়গড় করে। শুধু তাই নয়, যুধিষ্ঠিরের মহাপ্রস্থানের পথে হিমালয় যাত্রাকে জীবনের ‘জয়’ হিসাবে অনুসরণ করে তিনিও নিজের মোক্ষলাভের উদ্দেশ্যে গঙ্গায় নিজের দেহকে সকালের ব্রাহ্ম মুহূর্তে বিলীন করতে চেয়েছিলেন ‘আত্মবিসর্জন’ দিয়ে। ‘মৃত্যুবরণে যাতে বিলম্ব না হয়’ সে কারণে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নিজের সারা শরীর নিজেই ক্ষতবিক্ষতও করেছিলেন। কিন্তু হলে কী হবে, সেই ইচ্ছা তাঁর পূরণ হয়নি।
সোমবার সকাল ১০টা নাগাদ পূর্বস্থলী ১ ব্লকের জালুইডাঙায় ভরা বর্ষার ভাগীরথী নদীতে একটি টিউবে করে তাঁকে ভাসমান অবস্থায় দেখে উদ্ধার করে সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা। এর পরেই নাদনঘাট থানা পুলিশের সহযোগিতায় তাঁকে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় কালনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। যন্ত্রণায় কাতর, সেইভাবে কথা বলতে না পারলেও পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ষাটোর্ধ্ব বয়সি দীর্ঘকায় ওই বিদেশি বৃদ্ধ জড়ানো গলায় জানান, তাঁর নাম আলভারো। তিনি স্পেনের বাসিন্দা। নদিয়ার মায়াপুরে একটি মঠে থাকতেন। মহাভারতের টানে পরিবারকে বিদেশে ফেলে ‘শ্রীকৃষ্ণের এলাকা’ মায়াপুরে এসে বাস করছেন।
হাসপাতালে শুয়েও ভাঙা ভাঙা গলায় তাঁকে বিদেশি ভাষায় মহাভারতের বিভিন্ন চরিত্রের নিখুঁত বর্ণনা করতে দেখে বিস্মিত চিকিৎসক-নার্সরাও। পাশে থাকা অন্য রোগীরাও তাঁর এই অবস্থা দেখে হতবাক। ওই ব্যক্তির মতে, যুধিষ্ঠিররা মহাপ্রস্থানের পথে নিজেদের জীবন ত্যাগ করতে হিমালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, মহাভারতের কাহিনী অনুসারে, যুধিষ্ঠির তাঁর পৌত্র পরীক্ষিতকে রাজ্যভার সঁপে দিয়ে ভাইদের ও স্ত্রী দ্রৌপদীকে নিয়ে হিমালয় যাত্রা অর্থাৎ মহাপ্রস্থানের পথে যাত্রা শুরু করেন। ঠিক সেই পথকে অনুসরণ করতে চেয়েছিলেন আলভারো। তাঁর কথায়, “নিজেকে জিততে সেই ঘটনা অনুসরণ করেই আমি গঙ্গায় ভেসে হিমালয়ের কোলে পৌঁছতে চেয়েছিলাম।” তিনি আরও জানান, “সোমবার সকালে এক ব্রাহ্ম মূহূর্তে মাতা গঙ্গায় নিজের দেহকে বিলীন করে দিতে চেষ্টা করেছিলাম।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি ধারালো ছুরি দিয়ে তাঁর দুই হাত, পা ও গলার একটি অংশে আঘাত করেছিলেন আলভারো। সেই ছুরি তিনি আবার গঙ্গার জলেও ফেলে দেন বলে পুলিশকে জানান। দরদর করে রক্ত ঝরতে দেখা যায়। শরীরের বিভিন্ন অংশে গভীর ক্ষত রয়েছে। যদিও অপারেশনের পর তিনি স্থিতিশীল রয়েছেন বলে চিকিৎসক জানান। মায়াপুরের একটি মঠ সূত্রে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, আলভারো নামের ওই ব্যক্তি মায়াপুরের শ্রীচৈতন্য গৌড়িয় মঠের পুরী মহারাজের কাছে দীক্ষা নিয়েছিলেন। বেশ কয়েক বছর ধরেই তিনি ইসকন ও বিভিন্ন মঠের সেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। যদিও তার এই ‘আত্মবিসর্জন’-এর আচরণকে ‘মানসিক অবসাদে’র ফল বলেই অনুমান করছেন। আলভারোর ছেলেকে ঘটনার কথা জানানো হয়েছে বলে মঠসূত্রে জানা গিয়েছে। এক পুলিশ আধিকারিক জানান, চিকিৎসায় সুস্থ হওয়ার পর ওই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে পুরো ঘটনাটি জানার চেষ্টা করা হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.