দেবব্রত দাস, পাত্রসায়ের: এ যেন অন্য ক্ষুদিরাম। দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন ক্ষুদিরাম বসু। আর এই ক্ষুদিরাম মাঝি শিক্ষার জন্য প্রাণপাত করছেন। নবতিপর ক্ষুদিরাম মাঝি বাঁকুড়ার বাসিন্দা। বয়সের ভারে ঝুঁকে পড়েছেন। ঠিক করে শুনতে পান না, কথা বলতেও কষ্ট হয়। কিন্তু তাঁকে আজও প্রত্যেকে শিক্ষক বলেই চেনেন। ছোটবেলার বইতে যেরকম পড়তাম যে পাঠশালায় পণ্ডিত থাকতেন, ক্ষুদিরামবাবু ঠিক সেই রকমের শিক্ষক ছিলেন।
১৯৩০ সালের ৯ মে-তে জন্ম হয় ক্ষুদিরামের মাঝির। খুব কষ্ট করে তৎকালীন সময়ে ম্যাট্রিক পাশ করে শিক্ষকতায় আসেন তিনি। আড়ম্বরহীন, মানবিক। খালি পায়ে কাদা জল পেরিয়ে ধুতি, পাঞ্জাবি পরে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া শেখাতে যেতেন ক্ষুদিরাম। বাংলার ১৩৮৫ বঙ্গাব্দ, ক্ষুদিরাম মাঝি তখন মাত্র ২৫ টাকায় সাঁপুড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন। বন্যায় সব ধ্বংস হয়ে যায় সেই বছর। সর্বহারা হয়ে বাঁকুড়া জেলার ইন্দাস ব্লকের জাগলদ্বীপ গ্ৰামে বসবাস শুরু করেন তিনি।
মাইনের ২৫ টাকা হলেও ক্ষুদিরামবাবু অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। নিজে ছিলেন সর্বহারা। নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। তবুও স্কুলের বাইরে বিনামূল্যেই পড়াতেন গ্রামের গরিব ছেলেমেয়েদের। শোনা যায়, চাকরি জীবনের শেষ দশবছর জুতো পরে স্কুলে আসতেন ক্ষুদিরামবাবু। আজকের দিনে শিক্ষকরা রাজ্যা, জাতীয়স্তরে প্রচুর সম্মান পান। কিন্তু ৯৩ বছরের জীবনে ক্ষুদিরাম মাঝির ঝুলিতে আসেনি তেমন কোনও সম্মান।
বর্তমান সমাজে যখন শিক্ষাব্যবস্থা বলতে আমরা দামি-দামি বই, বেসরকারি নামীদামি বিদ্যালয়ের খরচ, সেই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে এই জবুথবু মানুষটার ভেঙে পড়া শরীর এবং ইন্দ্রিয় যেন তখনকার দিনের প্রকৃত মানবিক শিক্ষা ব্যবস্থার মূর্ত প্রতীক। ২০২৩ সালে দাঁড়িয়ে ক্ষুদিরাম মাঝির পাঠশালার পঠনপাঠন আজ নেই, নেই শিক্ষকের শাসন, নেই গুরুকুলের আড়ম্বরহীন পঠনপাঠন। ওঁর ছাত্র এবং প্রাক্তন শিক্ষক ৭৬ বছর বয়সী অজিত কুমার বেজ জানান “স্যারের পড়ানোর কোনও তুলনা হবে না, সেসব দিন ভোলার নয়।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.