সৌরভ মাজি, বর্ধমান: দুর্গাপুজো। বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব। উৎসব মানে তো সবার। কিন্তু এই উৎসবেই ধর্মের নামে পশুবলির মতো প্রথা আজও চালু রয়েছে অনেক জায়গাতেই। সেটা পারিবারিক পুজোই হোক বা বারোয়ারি। প্রাচীন রীতি মেনে আজও পশুবলি প্রথা চালু রয়েছে। ধর্মের নামে এই পশুবলি বন্ধের আর্জি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রী সকলের দ্বারস্থ হলেন বর্ধমানের পশুপ্রেমীরা। এমনকী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের কাছেও এই প্রথা বন্ধের আরজি জানিয়েছেন তাঁরা।
ধর্মের নামে পশুবলি প্রথা বন্ধে পথপ্রদর্শক বর্ধমানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সর্বমঙ্গলা মন্দিরের ট্রাস্ট কমিটি। সাবেক বর্ধমান জেলার পূর্বতন জেলাশাসক তথা বর্তমানে শিক্ষা দপ্তরের সচিব সৌমিত্র মোহনের প্রচেষ্টায় বছর চারেক আগে এই মন্দির কর্তৃপক্ষ পশুবলি প্রথা বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন কেউ মানত করলেও মন্দির চত্বরে ছাগ বলি দিতে পারেন না। কেউ পুজোর পর সেই ছাগ মন্দির চত্বরে ছেড়ে দিয়ে যান। কেউ আবার তা বাড়ি নিয়ে চলে যান। হাঁড়িকাঠে পশুবলি দেওয়া যায় না এখানে। সেই বছরই বর্ধমান শহরের আর এক জাগ্রত দেবী বীরহাটার বড়মা কালী মন্দিরেও বন্ধ করা হয় পশুবলি প্রথা। কিন্তু আরও বহু জায়গাতেও এখনও ছাগবলি বা পশুবলি প্রথা চালু রয়েছে।
ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ট্যাগলাইন বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। কিন্তু সবার বলতে শুধুমাত্র মনুষ্যপ্রজাতি বোঝালে বোধহয় ট্যাগলাইনের তাৎপর্যটা কমে যায়, এমনটাই জানাচ্ছেন পশুপ্রেমীরা। ধর্মের নাম করে উৎসবের সময় পশুবলি দেওয়াটাকে তাঁরা নৃশংস বলেই মনে করেন। বর্ধমানের একটি পশুপ্রেমী সংগঠনের সভাপতি অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও চিঠি পাঠিয়েছেন। তাতে তিনি লিখেছেন, কিছুদিনের মধ্যেই বাংলায় দুর্গোৎসব, তার পর কালীপুজো হবে। বাংলায় এই দুইটি সব থেকে বড় উৎসব। কিন্তু এই উৎসবের ধর্মের নামে পশুবলি দেওয়া হয়ে থাকে বহু জায়গায়। তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর। মানবতাই সবথেকে বড়। ধর্মেরও ঊর্ধ্বে মানবতা। তাই আমরা চাই ধর্মের নামে পশুবলি প্রথা বন্ধ করা হোক।”
একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশ রয়েছে ধর্মের নামে পশুবলি প্রথা বন্ধে। ‘ভয়েস ফর দ্য ভয়েসলেস’ নামে অভিজিৎবাবুদের সংগঠনের তরফে এই আর্জি নিয়ে মোহন ভাগবত, অমিত শাহ, দিলীপ ঘোষ, সোমেন মিত্র, বিধানসভায় বামফ্রন্টের নেতার কাছেও একই আর্জি জানিয়েছে। পাশাপাশি, নিজেদের তরফে বিভিন্ন পুজো কমিটিকে সচেতন করতে বাউল শিল্পীকে দিয়ে প্রচারও করাচ্ছে তারা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.