Advertisement
Advertisement
Purulia

ফাইট মাম্পি ফাইট…তীব্র আর্থ্রাইটিস উপেক্ষা করে মাধ্যমিকে দারুণ ফল পরিযায়ী শ্রমিককন্যার

পুরুলিয়ার মাম্পি দাস ১ নম্বরের জন্য প্রথম দশ থেকে ছিটকে গিয়েছে।

Students of Purulia struggles much with physical sickness but slips from merit list for just one marks
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:May 2, 2025 5:36 pm
  • Updated:May 2, 2025 5:40 pm  

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: প্রায় ২ বছর ধরে আর্থ্রাইটিসের ব্যথা একেবারে কাবু করে ফেলেছিল। সারা শরীরের একাধিক হাড়ে হাড়ে তীব্র ব্যথা, ফোলা ভাব, সেইসঙ্গে শক্ত হয়ে যাওয়া। একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থসবল মানুষের শরীরে ভিটামিন ডি-র পরিমাণ ৪০ থেকে ১০০ থাকার কথা। সেখানে তার ভিটামিন ডি নেমে গিয়েছিল তেরোয়! তাই বারণ হয়ে গিয়েছিল সাইকেল চড়া, বেশি হাঁটাচলা করা, ভারী জিনিস তোলা। কোনও জায়গায় একবার বসলে যে আর উঠতে পারে না সে! এমনকী মাঝেমধ্যে কলমটুকুও হাতে ধরে রাখতে পারে না। হাতের লেখা খারাপ হয়ে গিয়েছে। এত সব প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেও মাধ্যমিকে এবার সাড়াজাগানো ফলাফল করেছে পুরুলিয়ার মাম্পি দাস। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৫। তবে আক্ষেপ একটাই, মাত্র ১ নম্বরের জন্য প্রথম দশে তার জায়গা হয়নি।

১৭ বছরের মাম্পি পুরুলিয়ার পুঞ্চা ব্লকের ন’পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী। ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় ভালো। বাবা উত্তমকুমার দাস পরিযায়ী শ্রমিক। তিনি তামিলনাড়ুতে সুতোর কাজ করে সংসার চালান। মেয়ের চিকিৎসার খরচের পাশাপাশি মেয়ের লেখাপড়ায় যাতে কোনও সমস্যা না হয়, আর্থিক দিক দিয়ে তার সমস্ত ব্যবস্থা করে আসছে। মেয়ের লেখাপড়ার জন্য মা শান্ত দাস নিজের গ্রামে বিস্কুট, চানাচুরের দোকান করেছেন। হাতের কাজও করেন। ফি মাসে বাবার ৮ হাজার, আর মায়ের দেড় হাজার – মোট সাড়ে ৯ হাজার টাকায় কোনওভাবে সংসার চলে। দু’কামরার ঘরের মধ্যে একটি মাটি, আর একটি অবশ্য পাকা ছাদ। ঘুপচি সেই ঘরে আলো ঢোকে না। দাদা স্নাতক হয়ে চাকরির চেষ্টা করছেন।

Advertisement
মাধ্যমিকে দারুণ রেজাল্টের পর মায়ের সঙ্গে মাম্পি দাস। ছবি: অমিতলাল সিং দেও।

এত অসুবিধার জন্য গত বছর মাধ্যমিক দিতে পারেনি মাম্পি দাস। এবারও পরীক্ষা চলাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়েছিল সে। আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমাতে পায়ে-পিঠে সর্বক্ষণ বেল্ট পরতে হয়। টেস্টে ৬৬৯ নম্বর পাওয়া মেয়েটি মাধ্যমিকে পেয়েছে ৬৮৫। মার্কশিট বলছে, অঙ্ক, ইতিহাস ও ভৌত বিজ্ঞানে সে ১০০ নম্বর পেয়েছে। জীবন বিজ্ঞান ও ভূগোলে পেয়েছে ৯৭। বাংলায় ৯৬, ইংরাজিতে ৯৫। রাজ্যের মেধা তালিকায় দশম স্থানে যে ১৬ জন রয়েছে, তাদের প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৬। মাত্র এক নম্বর কম পাওয়ায় মেধাতালিকা থেকে ছিটকে যেতে হয়েছে মাম্পিকে। তাই আফসোসের শেষ নেই তার শিক্ষকদের।

মাম্পির এই সাফল্যে গ্রামের বাসিন্দা তথা প্রাথমিক শিক্ষক নিখিল সহিসের অবদান উল্লেখযোগ্য। শুধু বিনামূল্যে পাঠ দানই নয়, কীভাবে লড়াই করে এগিয়ে যেতে হবে সেই পাঠও দিয়েছেন ওই প্রাথমিক শিক্ষক। তাঁর কথায়, “ওকে শুধু একটাই কথা বলতাম – ফাইট, মাম্পি ফাইট। আর তাতেই সে এগিয়ে গিয়েছে।” স্কুলের টিচার-ইন-চার্জ শুকদেব মাহাতো বলেন, “আমাদের আফসোসের শেষ নেই। এক নম্বরের জন্য মাম্পি রাজ্যের মেধা তালিকায় জায়গা পেল না। ভীষণ আশা করেছিলাম, ও মেধাতালিকায় জায়গা করে নেবেই। তবে যেভাবে শারীরিক এবং আর্থিক প্রতিবন্ধকতার মধ্যে মাম্পি ফলাফলে নজর কাড়ল তাতে গর্বিত আমরা।” ন’পাড়ার বাসিন্দা তথা বরাবাজারের ভবানীপুর হাইস্কুলের ইতিহাসের শিক্ষক কুণাল সেন বলেন, “মাম্পি ভীষণ মেধাবী। শুধু লেখাপড়া নয়। সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে তার উজ্জ্বল দিক রয়েছে।”

পুরুলিয়ার পুঞ্চার ন’পাড়া হাইস্কুল। ছবি: অমিতলাল সিং দেও।

ন’পাড়া হাইস্কুলেই বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায় মাম্পি। তার ইচ্ছে চিকিৎসক হওয়ার। শারীরিক বাধায় যাতে কারও জীবন থমকে না যায়, সেইজন্য চিকিৎসক হওয়ার জেদ যেন আরও বেশি করে চেপে বসেছে। মাম্পির কথায়, “এখন আমার শরীরটা একদমই ভালো নেই। ভিটামিন ডি আরও কমে গিয়েছে। ওই পরীক্ষা করাতে এক হাজার টাকা লাগবে। হাতে টাকা না থাকার জন্য গত সাত মাস ধরে ওই টেস্ট করাতে পারছি না। ঈশ্বরকে শুধু এটাই বলি, আমি যাতে লক্ষ্যে পৌঁছতে পারি। আমার জন্য বাবা-মা এত কষ্ট করছে তাদের মুখে যাতে হাসি আনতে পারি।” মাম্পির ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল হোক, আমাদেরও এটাই প্রার্থনা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement