ছবি: বাসুদেব ঘোষ।
নন্দন দত্ত, সিউড়ি: কন্যাসন্তান জন্মানোয় সদ্যোজাতকে ঝোঁপে ফেলে পালানোর অভিযোগ। অভিযোগ উঠল বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে। স্থানীয়রাই বুধবার শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভরতি করেছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, সারা রাত ঝোঁপে পড়ে থাকায় সদ্যোজাতর অবস্থা আশঙ্কাজনক। দু’দিন না কাটলে কিছুই বলা যাবে না। গোটা ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে সিউড়ির নুড়াই পাড়ায়।
এদিকে শিশুকন্যার বাবা তাপস বাগদিকে চিহ্নিত করতে পেরে বেধড়ক মারধর করেছে উত্তেজিত জনতা। খবর পেয়ে বাড়ি থেকে মা ছুটকি বাগদিকে আটক করেছে সিউড়ি থানার পুলিশ। তবে জিজ্ঞাসাবাদের পর বাড়িতে আরও পাঁচ শিশুর উপস্থিতির কথা জানতে পেরে ওই গৃহবধূকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
জানা গিয়েছে, নুড়াই পাড়ার সিংহবাহিনীর মন্দিরের পিছনেই তাপস-ছুটকির সংসার। পেশায় টোটোচালক তাপসের আরও পাঁচ সন্তান রয়েছে। প্রথমজন কন্যাসন্তান হলেও বাকি চারজন পুত্র সন্তান। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ষষ্ঠ সন্তানের জন্ম দেন ছুটকি বাগদি। সদ্যোজাত শিশু কন্যা জানতে পেরেই দম্পতির মুখ ভার হয়ে যায়। অনেক ভাবনা চিন্তা করে রাতের অন্ধকারে শিশুকন্যাকে ঝোঁপে ফেলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। রাতে সুযোগবুঝে শিশুকন্যাকে মন্দির লাগোয়া ঝোঁপে ফেলে দিয়ে আসা হয় বলে অভিযোগ। মন্দিরের পাশেই রাস্তা। বেলা বাড়তে শিশুর কান্না শুরু হয়। জঙ্গলের মধ্যে থেকে প্রথমে কান্নার আওয়াজ পান আর এক টোটোচালক। তাঁর নাম উদয় অঙ্কুর। ভরদুপুরে জঙ্গল থেকে শিশুর কান্নার আওয়াজে খানিকটা থমকে গিয়েছিলেন ওই যুবক। পরে পাড়ার লোকজনকে ডেকে আনেন। এদিকে গত রাত থেকে অবিরাম বৃষ্টি শুরু হয়েছে। জলকাদা পেরিয়ে বাসিন্দারা সদ্যোজাতর সন্ধান পান। একফোঁটা দুধের শিশু ততক্ষণে মরণাপন্ন। একরত্তির শরীর ছেঁকে ধরেছে পোকায়। স্থানীয় গৃহবধূ রুনু বাগদি সদ্যোজাতকে পরিচ্ছন্ন করে সামান্য দুধ খাওয়ান। তারপর তড়িঘড়ি সিউড়ি হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতালে সদ্যোজাতর শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হলে শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়।
এরপরেই আসরে নামেন বাসিন্দারা। ভরদুপুরে জঙ্গলের মধ্যে সদ্যোজাত কী করে এল, শুরু হয় খোঁজ। নুড়াই পাড়ায় কোন গৃহবধূ সন্তানসম্ভবা ছিলেন জানতে বাড়ি বাড়ি অভিযান চলে। সেই সময়ই তাপস বাগদির স্ত্রী ছুটকি বাগদির নাম প্রকাশ্যে আসে। তাঁদের বাড়ি গিয়ে প্রসঙ্গটি তুলতেই প্রথমে ওই দম্পতি অস্বীকার করেন। পরে পাড়ার লোকের প্রবল চাপের মুখে দোষ স্বীকার করতে বাধ্য হন। তাপস বাগদি জানান, পাঁচ সন্তানকে নিয়ে সংসার চালাতে অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তাই সদ্যোজাত শিশুকন্যাকে তাঁরা ঝোঁপে ফেলে আসতে বাধ্য হয়েছেন। এরপরই তাঁকে বেধড়ক মারধর করে উত্তেজিত জনতা। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শিশুটি সুস্থ হয়ে উঠলে তাকে কোনও সরকারি হোমে রাখার ব্যবস্থা করা হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.