পলাশ পাত্র, তেহট্ট: হাতে করে কোনও উপহার নয়, ভালবেসে রক্ত দিয়ে যান। এমনই বিয়ের আয়োজন হল তেহট্টে। পাত পেড়ে খাওয়ার আগে বিছানায় শুয়ে পড়লেন নিমন্ত্রিতরা। রক্ত দিলেন স্বেচ্ছায়। এ সামাজিক বিয়ের পাত্রী সৌমিতা সরকার। পাত্র সোদপুরের অর্পণ হাজরা। কেন এমন আজব বিয়ে!
[রাতভর আদিবাসী নাবালিকাকে গণধর্ষণ, অভিযুক্ত ১২]
মাসদুয়েক আগে চোখের সামনে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চলে গিয়েছেন সৌমিতার পিসি। “চিকিৎসায় অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। একটা সময় চেয়েও রক্ত পাওয়া যায়নি। তারপরেই ঠিক করি..” চোখের জল মুছে জানিয়েছেন মেধাবী কন্যা। বি.টেক পাস করা সৌমিতা ঠিক করে নিয়েছিলেন নিজের বিয়েতে উপহার নেবেন না। নিমন্ত্রিতদের বলবেন রক্ত দিতে। মেয়ের ইচ্ছায় তার বিয়ে অভিনবভাবেই সাজিয়েছিলেন তাঁর বাবা-মা। তেহট্টর একটি লজে আয়োজন করা হয়েছিল বিয়ের। অনুষ্ঠানের আগে দুপুরে সেই মতো পঁচিশ জন রক্তদান করে গেলেন। সীমান্ত তেহট্ট মহকুমায় এ ধরনের ঘটনা প্রথম। নদিয়ার ব্লাড ব্যাঙ্ক টেকনিশিয়ান সৃজন বাগচীর কথায়, “এর আগে জেলায় এমন বিয়ে কাম রক্তদান কোনওদিনও হয়নি। আমি টেকনিশিয়ান হিসাবে জেলার বিভিন্ন জায়গায় যাই। কিন্তু কারও বিয়ের দিন রক্তদানের অনুষ্ঠান সম্ভবত এই প্রথম হল।”
[অমরনাথ যাত্রায় গিয়ে বাঙালি পুণ্যার্থীর মৃত্যু]
তিন মাস আগেই রক্ত দিয়েছিলেন সৌমিতা। বিয়ের শুভ অনুষ্ঠানে তাই তাঁর নিজের রক্ত দেওয়া হয়নি। মেধাবী সৌমিতা পড়াশোনার সঙ্গে গানেও পারদর্শী। এ বছর কল্যাণী থেকে বিটেক সম্পূর্ণ করেছেন। তবে শুধু নিমন্ত্রিতরাই নয়, কেউ এসে স্বেচ্ছায় রক্ত দিতে চাইলে সাদরে তাঁকে গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন সৌমিতার মা-বাবা। সৌমিতার বাবা সিদ্ধেশ্বরীতলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক সুবিনয় মণ্ডল। মা ডালিয়া মণ্ডল তেহট্টর খাসপুর সেন্টারের স্বাস্থ্য দফতরের কর্মী। মেয়ের এহেন সিদ্ধান্তে গর্বিত বাবা। জানিয়েছেন, “ওর বিয়ের দিনটা এমনভাবে সাজানোর জন্য ও যখন ইচ্ছা প্রকাশ করল, খুবই ভাল লেগেছিল।” বিকেলে পাত্রপক্ষের বাড়ি থেকে গায়ে হলুদ চলে আসে। মেয়ের গায়ে হলুদের বাটি এগিয়ে দিয়ে মা জানিয়েছেন, ছোট থেকেই ও মানুষের কষ্ট সহ্য করতে পারে না। আজ যেটা ও করল তা অত্যন্ত সাহসী পদক্ষেপ।
আর এমন দক্ষ যজ্ঞ সমাপ্ত করে কী বললেন সৌমিতা? “আমি কলকাতায় পড়াশোনার জন্য গিয়েছিলাম। ওখানে এক পিসি থাকতেন। দুমাস আগে আচমকাই ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। রক্ত যা প্রয়োজন ছিল তা পাওয়া যায়নি। তখনই আমি ভাবি রক্তের অভাব নিয়ে কিছু একটা করা দরকার।” তেহট্ট মহকুমার রেডক্রসের সম্পাদক অপূর্ব ঘোষ জানিয়েছেন, ওই পরিবারটা আমাদের সদস্য। সৌমিতা ছোট থেকেই গান, পড়াশোনায় ভাল। দিল্লিতে রেডক্রসের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ও প্রথম হয়েছিল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.