শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: নদী পেরিয়ে ব্যবসা করতে বাংলায় এসেছিলেন নাবিকরা। তাঁরাই সকলকে উৎসাহ জুগিয়েছিলেন। বলেছিলেন দুর্গাপুজোর (Durga Puja 2021) সূচনা হোক। ব্যস! তারপরই আজ থেকে ৫৭৫ বছর আগে শুরু হয় আরাধনা। যুগের পর যুগ কেটে গেলেও রায়গঞ্জের আদি দুর্গামন্দিরের ঐতিহ্য আজও অটুট।
কুলিক নদীর একেবারে ধারে অবস্থিত মন্দির। একাধিকবার বন্যার জলে ভেসে গিয়েছে। গোড়ার দিকে বাঁশের চটের দুর্গামণ্ডপ নদীর স্রোতে ভেসে যায়। সেই সময় টিনের চালা আর বাঁশের বেড়ায় দুর্গামণ্ডপ তৈরি হয়। কিন্তু নদী থেকে মাত্র একশো মিটার দূরের মণ্ডপ ঝড়বৃষ্টিতে ভেসে যেত। শেষপর্যন্ত চুন-সুরকি দিয়ে দুর্গামন্দির নির্মিত হয়।পরবর্তীতে কংক্রিটের ঠাকুরদালান গড়ে ওঠে। নদী বাঁধ দেওয়া হয়। তবে মন্দির থাকে অক্ষত। শতাব্দী প্রাচীন কংক্রিটের দালান ফের ২০০৮ সালে সংস্কার করা হয়।
দুর্গামন্দিরের অন্দরেই এখন প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পী চিত্ত পালের উত্তরপুরুষ চন্দন পাল-সহ পবিত্র, ঊজ্জ্বল ও বিশ্বজিৎরা। বংশ পরম্পরায় এই প্রাচীন পুজোর পুরোহিতের দায়িত্বে এবার গোপাল চক্রবর্তী। তাঁর বাবা চন্দ্রমোহন চক্রবর্তী একসময় এই পুজো সামলাতেন। সকাল সন্ধে মন্দিরে নিত্য পুজো হয়। করোনাতেও নিত্যপুজো বন্ধ হয়নি। পুজোর অষ্টমীতে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হন এই মন্দির প্রান্তে। পুজোর তিনদিন স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়ির হেঁশেলে উনুন জ্বলে না। সকলেই এখানে খিচুড়ি প্রসাদ খান। উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের পাশাপাশি মালদহ ও শিলিগুড়ি থেকে প্রচুর দর্শনার্থী ফি বছর পুজোয় এই প্রাচীন মন্দিরের দেবী দর্শনের মোহে ছুটে আসেন।
বর্তমানে দুধনাথ সাহা পুজো কমিটির সভাপতি। প্রবীণ সদস্য কাশীনাথ সাহা। রায়গঞ্জ বন্দর আদি সর্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটির সম্পাদক রুপেশ সাহা বলেন, “প্রায় ৫৭৫ বছরের প্রাচীন বন্দরের দুর্গাপুজো। একসময় দূরদুরান্ত থেকে বণিকরা নৌকা করে কুলিক নদী পেরিয়ে বন্দরে ব্যবসা করতে আসতেন। রাজার আমলে বণিকরাই প্রথম দুর্গাপুজোর সুচনা করেন। পরবর্তীতে সাধু সন্ন্যাসীরা দুর্গাপুজোর দায়িত্ব নেন। আর এখন স্থানীয় বাসিন্দারাই পুজোর আয়োজন করেন।”
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.