চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: পুজোর বার্তা নিয়ে এসেছিল রঘু ডাকাত। সপ্তমীতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়া সেই ডাকাত এক সের চাল, দশ টাকা, আর বিজয়ার মন্ডা-মিঠাই নিয়ে ফিরে গেল একাদশীতে। ফের তাঁর দেখা মিলবে পরের বছর। আসানসোলের কুলটি এলাকার কোলিয়ারি অধ্যুষিত গ্রামগুলিতে ফি বছরের রেওয়াজ এটাই। সপ্তমীর দিন বহুরূপী কীর্তন বেইদ ফুল্লরা ডাকাত হয়ে হানা দেন পাড়ায় পাড়ায়। তারপর একেকদিন একেক সাজে চলে তার পরিক্রমা।
অষ্টমীতে সাজেন মহিরাবণ, নবমীতে কালী, দশমীতে শিব ও একাদশীতে নন্দ ঘোষ সাজে পরবী নিয়ে ঘরে ফিরে যান প্রতি বছর। শ্রীনাথ বহুরূপীর মতো আজও কুলটির গাঁ-গঞ্জে নিয়মিত বহুরূপী সেজে বেড়ান কীর্তন বেইদ। সপ্তমীর সকাল গায়ে কালো পোশাক, হাতে বন্দুক, মাথায় ফেট্টি বেঁধে রঘু ডাকাত সাজে হানা দেন গৃহস্থ বাড়িতে। শিউলি, কাশ আর পদ্মের সুবাস মানেই যেমন আগমনির বার্তা, তেমনই কয়লাখনি অঞ্চলে কীর্তন বহুরূপীকে দেখতে পাওয়া মানেই দুর্গোৎসবের সূচনা। তাঁর আবির্ভাবেই স্থানীয় বাসিন্দারা টের পান, উমা আসছেন।
সারা বছর বহুরূপী সেজে রাজ্যের বাইরে নানা জায়গায় ঘুরে ঘুরে রোজগার করেন কীর্তন। জীবিকার তাগিদে কখনও ধানবাদ, কখনও ঝাড়খণ্ডে থাকেন তিনি। বাড়ির সঙ্গে প্রায় কোনও যোগই থাকে না। কিন্তু পুজোর চারটে দিন তিনি ফিরে আসেন নিজের গ্রামে। কীর্তনের বাড়ি আসানসোলের জগতডিহি গ্রামে। সপ্তমী সকালে যে কীর্তন “সাবধান, গোলি মার দেঙ্গে” বলে হুঙ্কার ছাড়েন, দশমী-একাদশীতে একাদশীতে সেই কীর্তনই সদর দরজায় মিষ্টি করে হাঁক পাড়েন, “কই গো মা-কাকিমারা, দই খেয়েছেন, দামটা দিন।” গাঁয়ের ঘরে ঘরে তৈরি আরশা মিঠাই পরবী নিয়ে কীর্তন ফিরে যান জগতডিহিতে। আর কোলিয়ারি এলাকার মানুষ অপেক্ষায় থাকেন পরের বছরের সেই ডাকাত কিংবা মহিরাবণের অট্টাহাসির শব্দ শোনার। ওই হাসিই যে আগামী শারদপ্রাতের বার্তা দেবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.