ধীমান রায়, কাটোয়া: শীতের রাত। আশপাশের বাড়িতে অনেকেই লেপ ঢাকা দিয়ে ঘুমে আছন্ন। কিন্তু হঠাৎ এত ধুপধাপ আওয়াজ কিসের? কয়েকজনের ঘুম ভেঙে যায়। অনেকে ভাবেন চোর এসে তাদের বাড়ির সিঁদ কাটছে না তো? সাহস করে কয়েকজন গুটি গুটি পায়ে আওয়াজের উৎস খুঁজতে বের হন। তারা উঁকি দিয়ে যা দেখলেন তাতে চক্ষু চড়কগাছ। তিন চারজন মিলে ঘরের ভিতরে প্রাণপণে গর্ত খুঁড়েই চলেছে। পাশে দাড়িয়ে বাড়ির মালিক উত্তম থান্ডার নিজেই। এটা কী হচ্ছে? প্রতিবেশীদের গলা শুনে প্রথমে থতমত খেয়ে যান। তারপর মেজাজের সঙ্গেই উত্তম থান্ডার জবাব দেন, “আমি যাই করি। তাতে তোমাদের কি? নিজের চরকায় তেল দাও।” তারপর জানা যায় ‘গুপ্তধনের সন্ধানে’ মাটি খুঁড়ছে বাড়ির মালিক।
ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রাম থানার দত্তবাটি গ্রামে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায় দত্তবাটি গ্রামের বাসিন্দা পেশায় জনমজুর উত্তম থান্ডার বাড়িতে একাই থাকেন। স্ত্রী বাইরে কাজ করেন। মাঝেমধ্যে বাড়ি আসেন। খড়ের চাল ও বেড়ার বাড়ি। গভীর রাতে উত্তমকে এভাবে মাটি খুঁড়তে দেখে পুলিশে খবর দেন প্রতিবেশীরা। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে গ্রেপ্তার গৃহকর্তা-সহ তিনজনকে। পুলিশের জেরায় উত্তম জানায়, গুপ্তধনের খোঁজেই তার ঘরের মধ্যে ২০ ফুট গর্ত করতে শুরু করেছিল সে। তার মধ্যে প্রায় ফুট আটেক গভীর গর্ত কাটাও হয়ে গিয়েছিল। মিশন শেষ হওয়ার আগেই হানা দেয় পুলিশ।
পুলিশকে সে আরও জানায় তাকে একজন বলেছে ইন্টারনেট সার্চ করে দেখা গিয়েছে যে উত্তমের ঘরটি যে জায়গার উপর, তার ২০ ফুট নীচে মোহর রয়েছে। পুলিশ তাকে জেরা করে জানতে পারে এই পরিকল্পনায় যুক্ত রয়েছে এনায়েতপুর গ্রামের বাসিন্দা অলোক মণ্ডল ও নলিয়াপুরের সজল রাজ। তারা দুজনেই উত্তমের ঘনিষ্ঠ। পুলিশ ওই দু’জনকেও গ্রেপ্তার করে। মঙ্গলবার ধৃতদের আদালতে তোলা হলে অবশ্য তারা জামিনে ছাড়া পেয়ে যান। কেতুগ্রাম থানার আই সি সুমন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমরা স্থানীয় এলাকা থেকে অভিযোগ পেয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করি। ঘটনা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে কি উদ্দেশ্যে ওই ঘরের মধ্যে সুড়ঙ্গ খোঁড়া হচ্ছিল।”
ছবি: জয়ন্ত দাস।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.