প্রতীকী ছবি
ধীমান রায়, কাটোয়া: দুজনই ছিলেন বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। তাঁদের মধ্যে এক যুবক সদ্য বিয়ে করেছিলেন। বৃহস্পতিবার ছিল তাঁর অষ্টমঙ্গলা। কিন্তু বাইকের দুরন্ত গতিই ওই দুই যুবক-সহ তিন তরতাজা প্রাণ কাড়ল। দুই বাইকের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষে তিন যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় শোকের ছায়া ভাগীরথী দুপাড়ে কাটোয়া ও বল্লভপাড়া এলাকায় (Katwa Accident)। বুধবার রাত প্রায় নয়টা নাগাদ ভাগীরথীর ওপারে নদিয়ার বল্লভপাড়া এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে তিনটি মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। পুলিশ জানায় মৃতরা হলেন সায়ন দত্ত (২৪), বাপন দাস (২১) এবং শুভজিৎ ঘোষ (১৯)। সায়ন কাটোয়া পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার চাউলপট্টি পাড়ায়। বাকি দুজন নদিয়ার কালীগঞ্জ থানার বল্লভপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
কাটোয়ার চাউলপট্টি এলাকার বাসিন্দা সায়ন ছিলেন বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। বাবা বাপি দত্ত ব্যবসা করেন। ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনার পর সায়ন নিজেও আলাদা ব্যবসা শুরু করেছিলেন। মুদিখানা সামগ্রীর হোলসেলার সায়নকে ব্যবসার কাজে প্রায় রোজই নদিয়ার কালীগঞ্জ এলাকায় যেতে হত। সঙ্গে বাইক নিয়ে ভাগীরথী ফেরিঘাট পার হয়ে সায়ন ওই এলাকায় বাইকে চড়ে ঘুরতেন। বুধবার রাতে কাজ সেরে বল্লভপাড়া ফেরিঘাটের দিকে আসার সময় বল্লভপাড়া দেবগ্রাম সড়কপথে জোড়াসাঁকোর কাছে অন্য একটি বাইকের সঙ্গে সায়নের সংঘর্ষ হয়। ওই বাইকটি চালাচ্ছিলেন বল্লভপাড়ার বাসিন্দা বাপন দাস। পিছনে বসেছিলেন তাঁর বন্ধু শুভজিৎ ঘোষ।
ঘটনার প্রত্যক্ষ্যদর্শী অপূর্ব সাহা ও তাঁর স্ত্রী দুর্গাদেবী জানান, বাপন দাস নামে ওই যুবকের বাইকে প্রচণ্ড গতি ছিল। অপূর্ববাবু টোটোচালক এবং সবজির ব্যবসাও করেন। ব্যবসার কাজ সেরে তাঁর স্ত্রীকে টোটোয় চাপিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। জানা গিয়েছে সায়নের বাইকের পিছনেই টোটো চালিয়ে আসছিলেন অপূর্ব সাহা। তিনি জানান, দুটি বাইকে ধাক্কা লাগার পর বাপনের বাইকের পিছনে বসে থাকা শুভজিৎ নামে ওই যুবক ধাক্কায় কার্যত উড়ে এসে টোটোর সামনের কাচের উপর এসে পড়ে। কাচ ভেঙে টোটোর ভিতরে ঢুকে যায়। তাতেই জখম হন অপূর্ববাবু ও তাঁর স্ত্রী। অপূর্ব সাহাও কাটোয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দুটি বাইকে ধাক্কায় পর তিনজনেই ছিটকে পড়েন। লোকজন জড়ো হয়ে যায়। পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে কাটোয়া হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসক তিনজনকে মৃত বলে জানান।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বাপন দাস এক ঠিকাদারের অধীনে কাজ করতেন। পাড়ারই এক নাবালিকার সঙ্গে প্রেম করে বছরখানেক আগে পালিয়ে গিয়েছিলেন বাপন। তা নিয়ে দুই পরিবারের সঙ্গে ঝামেলাও বাধে। তখন থেকেই বাপনের সঙ্গে তাঁর বাবার মনোমালিন্য শুরু হয়। সম্প্রতি প্রেমিকার ১৮ বছর বয়স হতেই বাপন তাঁকে বিয়ে করেন। কিন্তু দুই পরিবার থেকে মেনে না নেওয়ায় বাপন ওই এলাকাতেই তাঁর মাসি রেণুকা সাহার কাছে স্ত্রীকে নিয়ে থাকছিলেন। বৃহস্পতিবারই ছিল তাঁদের অষ্টমঙ্গলা। রেণুকাদেবী বলেন, “আমার জামাইবাবু বাপনের বিয়ে মেনে নেননি। তাই আমার কাছে রেখেছিলাম। সবে ওই বাচ্চা মেয়েটার বিয়ে হল। এখন ওরই বা কি হবে? বাপনকে যদি বাড়িতে মেনে নিত তাহলে হয়তো এই সর্বনাশ দেখতে হত না।” অপরদিকে মৃত শুভজিৎ দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট। তিনি টাইলস বসানোর কাজ করতেন। মাসখানেক আগে আর্থিক সংস্থা থেকে লোন নিয়ে বাপন একটি দামি বাইক কিনেছিলেন। ওই বাইকই প্রাণ কাড়ল তাঁর ও আরও দুজনের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.