স্টাফ রিপোর্টার, পুরুলিয়া: প্রায় ১৪ ঘণ্টা বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্য নিখোঁজ থাকায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘অপহরণে’র অভিযোগ বিদায়ী সাংসদ তথা গেরুয়া প্রার্থী জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর। শনিবার সকালে ওই পঞ্চায়েত সদস্য ও তার স্বামীকে পুরুলিয়ার বিদায়ী সাংসদ নিজেই একটি ঘর থেকে উদ্ধার করে নিজের কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে শাসক দলে যোগদান করানো নিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হন। জ্যোতির্ময়ের ‘নাটক’ করছেন, পালটা দিয়েছে পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।
চলতি মাসের ১৩ তারিখ পুরুলিয়ার হুড়া ব্লকের কলাবনি গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য দেশড়া গ্রামের বাসিন্দা আলপনা রায় তৃণমূলে যোগ দেওয়ার আবেদন জানান। সেই মোতাবেক শনিবার ওই গ্রামের বহু বিজেপি কর্মী-সমর্থকের সঙ্গে তাঁর তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই কথা জানাজানি হতেই স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব ওই পঞ্চায়েত সদস্যকে শাসক দলে যোগদান করা থেকে বিরত থাকতে চাপ দেয় বলে অভিযোগ। সঙ্গে উলটে শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘অপহরণ’ তত্ত্ব খাড়া করে।
জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো কলাবনি এলাকায় গিয়ে ‘অপহরণ’-র অভিযোগ তোলেন শাসক দলের বিরুদ্ধে। হাতে টর্চ নিয়ে মধ্য রাতে পঞ্চায়েত সদস্যকে খোঁজার লাইভ করেন ফেসবুকে। ঠিক তার ঘণ্টা দশেক পরে শনিবার সকালে শহরের উপকন্ঠে টামনা থানার শিমুলিয়া এলাকার নির্মীয়মান জাতীয় সড়কের পাশে একটি দোতলা বাড়ি থেকে ‘নিখোঁজ’ পঞ্চায়েত সদস্য আলপনা রায় ও তার স্বামী ডাক্তার রায়কে উদ্ধার করে নিজের কার্যালয় পুরুলিয়া শহরের রাঁচি রোডে নিয়ে যান। সেখানে সাংবাদিক সম্মেলন করে জানান, পঞ্চায়েত সদস্য ও তার স্বামীকে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য শাসক দলের নেতারা চাপ দিচ্ছিলেন।
এই ঘটনায় রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক, প্রাক্তন মন্ত্রী, পুরুলিয়া কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী শান্তিরাম মাহাতোকে কাঠগড়ায় তোলেন জ্যোতির্ময়। ২০১৮ সালে যখন তিনি পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি ছিলেন তখন জেলায় ৬ জন কার্যকর্তা ‘খুন’ হন। সেই প্রসঙ্গ টেনে তৃণমূল প্রার্থীকে দোষারোপ করেন। পালটা পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব এই ‘নাটকে’র কড়া সমালোচনা করেন।
মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “বিজেপি প্রার্থী যেসব অভিযোগ করেছেন তার কোন ভিত্তি নেই । পঞ্চায়েত সদস্য তৃণমূলে যোগদান করবেন বলে নিজেই আবেদন করেছিলেন। পরে তিনি মতবদল করেন। বিজেপি প্রার্থী ওই পঞ্চায়েত সদস্যকে রাতেই নিজের হেফাজতে নেন। আর উলটে নাটক করে যান। ‘অপহরণ’-র তত্ত্ব খাড়া করেন। আসলে সাংসদ ৫ বছরে কোন কাজ না করায় এই জেলায় পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছে বিজেপির। তাই এমন কুৎসা করছেন।”
পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট তথা পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শুক্রবার রাত থেকে শনিবার বেলা এগারোটা পর্যন্ত সাংসদের লাইভে ছত্রে ছত্রে নাটক প্রমাণিত হয়েছে। কখনও তিনি বলছেন পঞ্চায়েত সদস্য ‘অপহরণ’ হয়েছেন। আবার কখনও বলছেন তারা ভয় পেয়ে বাড়ি থেকে চলে গিয়েছেন। আমরা তো আশঙ্কা করছিলাম বিদায়ী সাংসদ নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে পঞ্চায়েত সদস্য ও তার স্বামীর কোন বড় ক্ষতি করে না বসেন।”
এই ঘটনায় জেলা তৃণমূল প্রশ্ন তুলেছে, পুলিশকে কেন জানানো হয়নি? কেন হুড়া থানায় অভিযোগ হয়নি? যখন রাতেই সাংসদ ওই পঞ্চায়েত সদস্য ও তার স্বামীকে নিজের হেফাজতে নেন। তখন একজন আইনসভার সদস্য হয়ে তিনি পুলিশকে কেন জানালেন না? তাহলে তো তিনি পুলিশের কাছ থেকেও এই ঘটনার আড়াল করলেন। কিন্তু বিদায়ী সাংসদ বলেন, “পুলিশকে জানিয়ে কি হবে? সন্দেশখালিতে কি হয়েছে?” বিজেপির ওই পঞ্চায়েত সদস্য বলেন, “তৃণমূলের লোকজন এসে আমাদেরকে যোগদানের জন্য চাপ দিতে থাকেন। তাই শুক্রবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ আমরা কোনভাবে পালিয়ে যাই। আমাদের পেছনে ধাওয়া করেন তৃণমূলের কর্মীরা। তাই ওই অবস্থায় পুলিশকে কিছু জানাতে পারিনি।” কিন্তু তৃণমূলে যোগ দেওয়ার আবেদন করলেন কেন এবং বিজেপি প্রার্থীর হেফাজতেই কীভাবে এলেন? সেই বিষয়ে উত্তর দিতে পারেননি ওই গেরুয়া পঞ্চায়েত সদস্য।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.