দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: সিঙ্গুরে ধরনা মঞ্চ থেকে নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে রাজ্য সরকারকে বিঁধলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। মঙ্গলবার এখানে দলের ডাকা ‘কৃষক বাঁচাও আন্দোলনে’ যোগ দিয়ে নন্দীগ্রামের (Nandigram) বিধায়ক বলেন, নন্দীগ্রামে কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে যেভাবে তিনি আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন, এখানেও দলের বিধায়কদের নিয়ে কৃষকদের সঙ্গে সেভাবেই লড়াই করবেন। একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৃষিনীতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
শুভেন্দুর মন্তব্যের পরই পালটা জবাব দিতে দেরি করেনি তৃণমূল (TMC)। এ প্রসঙ্গে রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের (Kunal Ghosh) কটাক্ষ, “যে দলের প্রধানমন্ত্রীকে কৃষকদের কাছে হাত জোড় করে ক্ষমা চাইতে হয়, সেই দলের মুখে কৃষকের কথা মানায় না।” অধিকারী পরিবারকে বিঁধে কুণাল বলেন, “মমতার কৃষক-নীতি যদি ভ্রান্ত হয়, তা হলে তার উপর ভর করে শুভেন্দু এবং তাঁর বাবা রাজনৈতিক কেরিয়ার তৈরি করলেন কেন? এতদিন পর বিবেক জাগল?”
সারের ন্যায্য দাম, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ-সহ সাত দফা দাবিতে মঙ্গলবার থেকে সিঙ্গুরের গোপালনগরে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের পাশে ধরনায় বসেছে বিজেপি। শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদার, দিলীপ ঘোষদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন কিষান মোর্চার সভাপতি মহাদেব সরকার, অগ্নিমিত্রা পাল, রাহুল সিনহা, অশোক দিন্দা-সহ রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। তবে মঞ্চের ধারেকাছে দেখা যায়নি হুগলির সাংসক লকেট চট্টোপাধ্যায়কে (Locket Chatterjee)। যা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও কোনও নেতাই মন্তব্য করতে চাননি। উপস্থিতি চোখে পড়েনি সিঙ্গুরের চাষিদেরও। যা নিয়ে কটাক্ষ শোনা গিয়েছে তৃণমূলের গলায়।
সম্প্রতি নিম্নচাপের অতিবৃষ্টিতে হুগলি, বর্ধমান, হাওড়ায় চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আলু ও সবজি চাষে। এই প্রসঙ্গ টেনে শুভেন্দু দাবি করেন, মুখ্যমন্ত্রী দুর্গাপুজোয় ক্লাবগুলোকে ২০০ কোটি টাকা বিতরণ করেছেন। সেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের বীজ, সার ও জলের জন্যও অবিলম্বে ২০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করুন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কৃষক আন্দোলনের কথা বলে ক্ষমতায় এসেছিলেন। তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরও তিনি কৃষকদের জন্য কিছু করেননি। শুভেন্দু বলেন, এই ধরনা থেকে বৃহত্তর কৃষক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। প্রয়োজনে সিঙ্গুর থেকে নবান্ন অভিযানের ডাক দিতে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে আহ্বান জানান তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীর কৃষিনীতি নিয়ে শুভেন্দুর সমালোচনার পাল্টা তোপ দেগেছে তৃণমূলও। বিরোধী দলনেতার উদ্দেশে তোপ দেগে রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, “শুভেন্দু অধিকারী আজ বলছেন, মমতার পথ ভুল। তা হলে ২০০৫ সাল থেকে কেন মমতার পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলানোর জন্য এত পীড়াপীড়ি করতেন? যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৃষক আন্দোলনে ভর করে শুভেন্দু ও শিশির অধিকারী নিজেদের রাজনৈতিক ভিত্তি পোক্ত করেছেন, আজ তাঁরাই বলছেন মমতার পথ ভুল! কেন তখন দলের নেত্রীর সঙ্গে ছিলেন সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনে? তৃণমূলের টিকিটে সাংসদ হয়েছিলেন কেন? ২০১১-তে কেনই বা ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন?” শুভেন্দুকে ‘পেগাসাস অধিকারী’ নামে উল্লেখ করে কুণাল বলেন, “যদি এত দিন আগে থেকেই ভুল ধরে ফেলেন, তাহলে মমতার দয়ায় তৃণমূল কর্মীদের আবেগকে ব্যবহার করে নিজের রাজনৈতিক কেরিয়ার তৈরি করেছিলেন কেন?”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.