সংগ্রাম সিংহরায়, শিলিগুড়ি: একসময় দলের কর্মীদের সংগঠনের কাজে দক্ষ করতে পার্টির ক্লাস নেওয়া ছিল সিপিএম-এর রেওয়াজ। সেখানে নানা তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা হতো। বোঝানো হত তার বাস্তব প্রয়োগ।আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে বামপন্থী শিবিরের সেই ছায়া দেখা যাচ্ছে তৃণমূল কার্যালয়গুলিতে। জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ ব্লকে তৃণমূলের পাঁচটি সাংগঠনিক অঞ্চলের কর্মীদের নিয়ে রীতিমতো ক্লাস করানো হচ্ছে।
কী বিষয়ে ক্লাস চলছে? কীভাবে নির্বাচনের আগে প্রচার করতে হবে, কোন কোন প্রকল্প রাজ্যের তরফে এখনও পর্যন্ত গৃহীত হয়েছে, জনসংযোগ কীভাবে বাড়াতে হবে, কেউ কোনও দাবি নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীদের কাছে গেলে কীভাবে তাঁদের সমাধান করে দিতে হবে, সবটাই পাখি পড়ার মতো করে শেখানো হচ্ছে দলীয় কর্মীদের। এখানেই শেষ নয়। কে, কেমন শিখলেন, তার মূল্যায়ণও হচ্ছে। একশো নম্বরের পরীক্ষা দিচ্ছেন কর্মীরা। তবে এই পরীক্ষায় পাশ-ফেলের ব্যাপার নেই। কেউ কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলে, তাঁকে ফের পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ক্লাসে। যার যেখানে খামতি আছে দলের কর্মসূচি সম্পর্কে, সেগুলির সংশোধন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা হচ্ছে পাঁচটি এলাকায়। ফুলবাড়ি ১ ও ২, ডাবগ্রাম ১ ও ২ এবং ফুলবাড়ি ২ কে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। শেষ হবে ৫ মার্চ। যে কোনও বোর্ডের পরীক্ষার মতোই ১০০ নম্বরের পরীক্ষার জন্য সময় দেওয়া হচ্ছে ৩ ঘণ্টা। দশটি করে প্রশ্ন। পরীক্ষার্থী কারা? মূলত অঞ্চল সভাপতি, বুথ সভাপতি, বুথের যুব সভাপতি, বুথ মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী, আইএনটিটিইউসির পদাধিকারীরা এই পরীক্ষার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছেন।
রাজগঞ্জ ব্লক তৃণমূলের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন দলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “দলের প্রয়োজনে অনেকে অনেক কৌশল নিচ্ছে। এই পদক্ষেপ অত্যন্ত কার্যকরী বলেই মনে হচ্ছে। দলের প্রতি তাঁদের এই কর্তব্যনিষ্ঠা প্রশংসা করার মতো।” তৃণমূলের ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি সাংগঠনিক ব্লকের সভাপতি তথা রাজগঞ্জ জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ দেবাশিস প্রামাণিক বিষয়টি নিয়ে উৎসাহিত। তাঁর দাবি, “রাজ্যে এমন পদ্ধতি আমি প্রথম চালু করেছে। এটি খুবই কার্যকর পদ্ধতি বলে মনে হচ্ছে। সবার সঙ্গে কথা বলেই এই প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। সকলের ভাল সাড়া মিলছে। পাশাপাশি দলের প্রতি কর্মীদের শ্রদ্ধা ও একাত্মতা যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনই কেউ কখনও প্রতি আক্রমণ করলে, তাকে বুঝিয়ে জবাব দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে প্রত্যেক কর্মীর।” দেবাশিসবাবু আরও জানান, “অনেক সময় দেখা যায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে নেতাকর্মীরা বিভিন্ন প্রকল্পের নাম গুলিয়ে ফেলেন। কিংবা বেফাঁস মন্তব্য করে ফেলেন। সেগুলি যাতে না হয়, সে বিষয়ে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.