দেব গোস্বামী, বোলপুর: বিতর্কিত ফলক ঐতিহ্যপূর্ণ স্থান থেকে সরবে না। ফলক বিতর্কে মৌনব্রত ভাঙল বিশ্বভারতী (Visva Bharati)। অবশেষে প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করে ফলক নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে কর্তৃপক্ষ। প্রকারন্তরে বুঝিয়ে দিল, ফলক তাঁরা সরাবে না। এ নিয়ে থানা পুলিশ, আন্দোলন- প্রতিবাদ যাই হোক না কেন, মুখ্যমন্ত্রীর চাপের সামনে মাথা নত করতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শনিবার, শান্তিনিকেতন থানায় দ্বারস্থ হয় শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট। সম্পাদক অনিল কোনার অভিযোগ করেন, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ অনুমতি ছাড়ায় ট্রাস্টের সম্পত্তির উপর অরাবীন্দ্রিক ফলক লাগায়। যা শান্তিনিকেতনের মর্যাদা ক্ষুন্ন করছে এবং উপাসনার গৃহের শান্তি বিঘ্নিত করছে। এর পরই সোমবার পালটা বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ শান্তিনিকেতন থানায় অভিযোগ করে।
তাঁদের অভিযোগ, আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রী ও উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী নাম সম্বলিত ফলকের সঙ্গে ট্রাস্টের কোনও সম্পর্কে নেই। শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট মালিকাধীন হলেও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনুমোদনযোগ্য অবস্থান রয়েছে। ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের বাইরে কাজ করে। পৌষ মেলা-সহ নানা উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ফলক লাগানোর জন্য ট্রাস্টের থেকে আলাদা অনুমতির প্রয়োজন নেই। অতীতেও কোন অনুমতি ছিল না। এছাড়াও ট্রাস্টের সম্পাদকেও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয় অভিযোগকারী তিনি নিজে ট্রাস্টের কর্মচারী। প্রাক্তনী এবং কর্তৃপক্ষের পেনশনভোগী। তাঁর অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং কাল্পনিক।
বিশ্ব হেরিটেজের ফলক বিতর্ক এখন তুঙ্গে। তৃনমূল টানা ১১ দিন অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবাদে সরব প্রাক্তনী,পড়ুয়া,আশ্রমিক ও বোলপুর-শান্তিনিকেতনের বাসিন্দারা। অন্যান্য সংগঠনের পক্ষ থেকেও হয়েছে প্রতিবাদ। এবার সমালোচনার জবাব দিতে ময়দানে নেমেছে বিশ্বভারতী। ফলক বসানোর যৌক্তিকতা নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে বিশ্বভারতী। সেখানে নিজেদের অবস্থানের স্বপক্ষে জনসংযোগ আধিকারিক মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায় প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করেন।
তাতে বলা হয়েছে,”রবীন্দ্রনাথ আজকের বিশ্বভারতীতে পণ্যে রূপান্তরিত হয়েছেন। রাবীন্দ্রিক হয়ে গিয়েছে স্বার্থসিদ্ধির সোপান। কতজন সাপ্তাহিক উপাসনায় যোগদান করেন? কতজন বৈতালিকে বা অন্যান্য অনুষ্ঠানে আসেন? ফলক বিতর্কে দাবি করা হচ্ছে, এটা বিশ্বভারতীর ঐতিহ্য বিরোধী। তারা মিথ্যের স্বর্গে বাস করছেন। বাংলাদেশ ভবনে রয়েছে আচার্য নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নাম। বিচিত্রাতে বিশ্বভারতীর জওহরলাল নেহেরু, কিংকর উদ্যানে কে জি সুব্রহ্মনিয়ম, দিনেন্দ্রকুঞ্জতে সংগীতশিল্পী দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের নাম সহ অজস্র উদাহরণ তোলা হয়েছে।” কটুক্তি করে বলা হয়েছে, “রাবীন্দ্রিকরা যতই গলা ফাটাক, বিশ্ব ঐতিহ্য তকমার কৃতিত্ব আচার্য নরেন্দ্র মোদি আর উপাচার্য শ্রী বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর জন্যই। এটার তো পরিবর্তন করা যাবে না। অতএব ফলকে এই নামগুলো অপ্রাসঙ্গিক, তা বলা মুর্খামি। যারা ফলক বিতর্কে বিশ্বভারতীতে অশান্তি করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা করছেন, তারা অজ্ঞতা প্রকাশ করছেন। অহেতুক রাজনীতি করছেন নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য।”
প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে পরিষ্কার বিশ্বভারতীর ফলক বিতর্কে নিজেদের জেদ থেকে এক পা সরবে না। শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের সম্পাদক অনিল কোণার বলেন,”ট্রাস্টের সম্পত্তির উপর অ-রাবিন্দ্রিক ফলক লাগিয়ে উপাচার্য বিতর্কিত হতে চাইছেন। যা সম্পূর্ণ শান্তিনিকেতনের মর্যাদা ক্ষুন্ন করছে এবং উপাসনা গৃহের শান্তি বিঘ্নিত করছে। জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের উচিত অবিলম্বে যথাযথ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার।” বিশ্বভারতীর অধ্যাপকদের একাংশ বলছেন, ৮ নভেম্বর উপাচার্যের মেয়াদ শেষ। তাই মাথা ঠিক না রাখতে পেরে যাবার বেলায় বিতর্কিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নিজের প্রচার চেষ্টা করছেন মাত্র।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.