ছবি: প্রতীকী
দীপঙ্কর মণ্ডল: কোভিডের (COVID-19) প্রথম ধাক্কায় সরকারি কর্মীদের জন্য ‘কোয়ারেন্টাইন লিভ’ চালু করেছিল রাজ্য সরকার। তৃতীয় ঢেউয়ের আবহে এবার রাজ্যের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আধিকারিক ও শিক্ষাকর্মীদের জন্য চালু হল সবেতন নিভৃতবাসের ছুটি। মঙ্গলবার স্কুলশিক্ষা ও উচ্চশিক্ষা দপ্তর আলাদা করে এ বিষয়ে নির্দেশিকা জারি করেছে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, “সরকারি কর্মীদের সংক্রামক রোগের জন্য যে কোয়ারেন্টাইন ছুটি দেওয়া হয় তার সম্প্রসারণ হল। এবার থেকে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও একই ছুটি চালু করল স্কুলশিক্ষা ও উচ্চশিক্ষা দপ্তর।”
কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি সার্স, মার্স, অ্যাভিয়ান বা নোবেল ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং ক্রিমিয়ান কঙ্গো হোমারহেজিক ফিভারের জন্যও মিলবে কোয়ারেন্টাইন লিভ। শিক্ষক, কর্মী ও আধিকারিকরা নিজে বা তাঁদের পরিবারের কেউ ওই সংক্রামক রোগগুলির কোনও একটিতে আক্রান্ত হলে সবেতন ছুটি পাবেন। চালু ছুটি যেমন সিএল, এমএল বা পিএল যা বরাদ্দ থাকে তা আগের মতই অপরিবর্তিত থাকবে। আক্রান্ত হওয়ার ২১ দিনের মধ্যে প্রামান্য নথি কর্তৃপক্ষকে দেখাতে হবে। বিশেষ ক্ষেত্রে প্রমাণ দেখাতে হবে ৩০ দিনের মধ্যে।
২০২০ সালের মার্চে এদেশে হানা দেয় কোভিড-১৯। প্রবল ছোঁয়াচে এই অসুখে ক্ষতি কমাতে নানা পদক্ষেপ করতে শুরু করে নবান্ন। বন্ধ করে দেওয়া হয় ক্লাসরুম। দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর আগে স্কুলে শুধুমাত্র নবম থেকে দ্বাদশের ক্লাস হয় কিছুদিন। গত বছর ১৬ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় ফের চালু হয় নবম থেকে দ্বাদশের ক্লাস। লকডাউনের পর প্রথমবার খুলেছিল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষের দরজা। কিন্তু অতিমারির তৃতীয় ঢেউ প্রবলভাবে আছড়ে পড়ার আশঙ্কায় ৩ জানুয়ারি থেকে ফের বন্ধ করা হয়েছে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাসরুম। সরকার নির্দেশ দিয়েছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পড়াশোনা হবে শুধুমাত্র অনলাইনে।
তবে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের ৫০ শতাংশকে প্রতিষ্ঠানে হাজিরা দিতে হবে। কোভিডের প্রথম ঢেউ থেকেই শিক্ষকরা কোয়ারেন্টাইন লিভের দাবি জানিয়েছিলেন। সেই দাবি মান্যতা পাওয়ার পর শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের কিংকর অধিকারী, প্রধানশিক্ষক সংগঠনের কর্তা চন্দন মাইতি, এসটিইএ-র অনিমেষ হালদাররা শিক্ষা দপ্তরকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
কোভিডের মাঝে সুপার সাইক্লোন আমফান আছড়ে পড়েছিল রাজ্যের উপকূল এলাকায়। ব্যপক ক্ষতি হয়েছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিরও। পরিকাঠামোগত ক্ষত নিরাময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ক্ষতিপুরণ দাবি করলেও তা মেলেনি বলে অভিযোগ। রাজ্যের নিজস্ব তহবিল থেকেই প্রতিষ্ঠানগুলি সংস্কার হয়েছে। পাশাপাশি স্কুলে চলেছে পড়ুয়াদের মিড–ডে মিলের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ। চলেছে নতুন ক্লাসে ভরতি, বই, পোশাক, জুতো বিতরণ। মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকের রেজিস্ট্রেশন, কন্যাশ্রী, সবুজসাথী, তরুনের স্বপ্ন প্রভৃতি প্রকল্পের কাজও হয়েছে। প্রশাসনিক কাজগুলির জন্য স্কুলে আসতে হয়েছে শিক্ষক–শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের। অন্যদিকে কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও নিয়মিত প্রতিষ্ঠানে হাজিরা দিয়েছেন আধিকারিকরা। স্কুলশিক্ষা দপ্তর জানিয়েছে, আগের মতই শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্ত প্রকল্প চালু থাকবে। পাশাপাশি স্কুলে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের ভ্যকসিন দেওয়ার কাজও চলবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.